তিনদিনের মধ্যে বিচার শুরুর দাবিতে সিকৃবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) শিক্ষার্থী ঘোরি মো. ওয়াসিম আফনানকে বাস থেকে ফেলে চাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তিনদিনের মধ্যে এর বিচারকাজ শুরু করার দাবিতে তারা এ তিনদিন ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন।
ওয়াসিমের সহপাঠীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। দুপুর ১২টার দিকে তারা নগরীর চৌহাট্টায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, দুর্ঘটনার মামলা নয়, দুর্ঘটনার মামলাকে হত্যা মামলায় নিতে হবে, তিনদিনের মধ্যে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে, এ তিনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ওয়াসিম হত্যার প্রতিবাদে বাসচালক ও তার সহকারীকে আইনের আওতায় এনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর, ‘উদার’ পরিবহন বাসের রুট পারমিট ও লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানান। এ ছাড়া নিরাপদ সড়কের দাবিতে তারা কোনো ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলতে পারবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন। দেড়টা পর্যন্ত চলে এই অবরোধ।
বিকেল সাড়ে ৪টায় শিক্ষার্থীরা আবারও চৌহাট্টায় জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আর নয় আশ্বাস, উঠে গেছে বিশ্বাস’, ‘দড়ি লাগলে দড়ি নে, ঘাতকদের ফাঁসি দে’, ‘আর নয় আশ্বাস, ভেঙে গেছে বিশ্বাস’সহ নিরাপদ সড়কের দাবিতে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। সন্ধ্যা ৬টায় তারা চৌহাট্টা থেকে মিছিল বের করে।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু বলেন, ‘এটি একটি পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। এর বিচার হতে হবে। যদিও পুলিশ প্রশাসন আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করছে। এরই মধ্যে হেলপার গ্রেপ্তার হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এর বিচার করা দরকার।’
‘এ কারণে ছেলেমেয়েরা রাস্তায় নেমেছে। আমরা এদের নিষেধ করেছিলাম, তারপরও ওরা রাস্তায় নেমেছে যাতে বিচারকাজ দ্রুত হয়। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, যত দ্রুত সম্ভব ওরা চলে যাবে। কিন্তু ওরা বলে, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও ছেলেমেয়েরা আসবে মুভমেন্ট করতে। কিন্তু আমি যত দ্রুত সম্ভব এদের এখান থেকে নিয়ে যাব’, যোগ করেন প্রক্টর।
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) উপকমিশনার আজবাহার উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকালের মধ্যেই ঘাতক বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা সব দাবি মেনে নিয়েছি। আজকে যারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করছে তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে যাবে।’
নিহত ওয়াসিম আফনান সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষে পড়তেন। তিনি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের রুদ্র গ্রামের মো. আবু জাহেদ মাহবুব ও ডা. মীনা পারভিন দম্পতির একমাত্র সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য গতকাল শনিবার নবীগঞ্জের আউশকান্দি থেকে উদার পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো ভ-১৪-১২৮০) ওঠেন।
স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও সিকৃবির শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ থেকে সিলেটগামী উদার পরিবহনের ওই বাসে ওয়াসিমসহ সিকৃবির ১১ শিক্ষার্থী ওঠেছিলেন। তাঁরা মৌলভীবাজারের শেরপুরে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য নেমে পড়েন। তখন ভাড়া নিয়ে বাসের চালক ও হেলপারের সঙ্গে তাঁদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ভাড়া পরিশোধ করে তাঁরা বাস থেকে নেমে আসছিলেন। ওয়াসিম আফনান ছিলেন সবার পেছনে। তিনি বাস থেকে নামার আগেই তাঁকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে ফেলে দেন হেলপার মাসুক আলী। এরপর বাসের চালক জুয়েল আহমদ বাসের গতি বাড়িয়ে দেন। বাসটি ওয়াসিমের শরীরের ওপর চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।
গুরুতর আহত ওয়াসিম আফনানকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
শনিবার রাতেই বাসটিকে ওসমানীনগর থেকে জব্দ করে পুলিশ। বাসচালক জুয়েল আহমদকে দক্ষিণ সুরমা থেকে এবং হেলপার মাসুক আলীকে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে আটক করে পুলিশ।