শিবপুরে ব্যালট পেপার ছিনতাই-জাল ভোট, পুলিশের গুলি

Looks like you've blocked notifications!
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার তেলিয়া ঝাওয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে আটক মাজহারুল। ছবি : এনটিভি

জাল ভোট প্রদান, ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এসব ঘটনা ঘটে।

জাল ভোট ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের সময় হামলার হাত থেকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে বাঁচাতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় নৌকা প্রতীকে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে মাজাহারুল নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

এছাড়া বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ও অনিয়ম ছাড়াই শেষ হয়েছে  জেলার মনোহরদী, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।  তবে চারটি উপজেলা নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্র ছাড়া প্রায় সব কেন্দ্রেই ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল। ব্যালট পেপার ছিনতাই ও জাল ভোট প্রদানের সত্যতা পাওয়ায় শিবপুরের দুইটি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, জেলার চার উপজেলা শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব ও রায়পুরায় মোট ৪১২টি ভোট কেন্দ্রের ১ হাজার ৮৮০টি ভোট কক্ষে রোববার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চারজন বিচারিক হাকিম, ১৮ জন নির্বাহী হাকিম, ১১ প্লাটুন বিজিবি ছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় দুটি করে র‌্যাবের টিম ও পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।

শিবপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল সোয়া ১০টায় বহিরাগত লোকজন তেলিয়া ঝাওয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রবেশ করে। তারা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়। পরে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে থাকে। এ সময় উপস্থিত পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেন। ফলে নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকতারা অসহায় হয়ে যায়। খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা কেন্দ্রে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় মাজহারুল নামে নৌকার এক সমর্থককে আটক করা হয়।

তেলিয়া ঝাওয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মাইনউদ্দিন আব্বাস বলেন, দুর্বৃত্তদের সিল মারা ৭০ থেকে ৮০ টি ব্যালট বাতিল করা হয়েছে। কেন্দ্রের পরিবেশ স্বাভাবিক করে ভোট গ্রহণ শুরু করা হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্টেট মেহেদী হাসান কাউসার বলেন, মাজহারুলকে কেন্দ্রে অনধিকার প্রবেশের কারণে আটক করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। আটক মাজহারুল তেলিয়া গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক।

দুপুরে শিবপুরের আলিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে নৌকা প্রতীক ও টিয়া পাখির প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করে দেওয়া হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়।

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে রোববার নৌকা প্রতীকে সিল মারা ব্যালট ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। ছবি : এনটিভি

দুপুর দেড়টায় শিবপুরের কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আট-দশজন আওয়ামী লীগ কর্মী সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে জাল ভোট দেন। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীর উপস্থিত হলে তাঁরা চলে যান। পরে কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নূরে আলম জাল ভোট বাতিল করেন।

দুপুর আড়াইটার দিকে শিবপুর সৈয়দনগর আতাউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল লাঠিসোঁটা নিয়ে স্কুলের দেয়াল টপকে কেন্দ্রে প্রবেশ করে। পরে কেন্দ্রের ভোট কক্ষে প্রবেশ করে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়। পরে একে একে জাল ভোট দেয়। এ সময় কর্তব্যরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জাল ভোট দিতে বাধা দেওয়ায় তাঁর ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পর পর কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এ সময় তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়।

সৈয়দনগর আতাউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আহসানুল কবির বলেন, সকাল ৮ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৪ শতাংশ ভোট গ্রহণ করা হয়। এরই মধ্যে দুপুরে একদল লোক কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে জাল ভোট দেওয়া শুরু করে। বাধা দিলে তারা আমার ওপর হামলা করতে আসে। তখন আমাকে বাঁচাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পর পর কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এ সময় তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে চারটি উপজেলা নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্র ছাড়া প্রায় সব কেন্দ্রেই ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও জাল ভোট প্রদানের সত্যতা পাওয়া শিবপুরের তেলিয়া ঝাওয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র ও বংশিদিয়া কেন্দ্রের ভোট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে পুনরায় ভোট নেওয়া হবে। তবে গুলিবর্ষণের কোনো খবর পাইনি।