আবাসিক এলাকায় কারখানা, বিস্ফোরণে উড়ে গেল তিনতলা ছাদ

Looks like you've blocked notifications!
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় আজ মঙ্গলভার ভোরে বোম্বে ফেব্রিক্স অ্যান্ড ডাইং কারখানা নামে একটি ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ছবি : এনটিভি

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় আবাসিক এলাকার মধ্যে একটি ডাইং কারখানার বয়লারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর ওই ভবনের ছাদ উড়ে গেছে। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সদরের পাগলা রেলস্টেশন সংলগ্ন বোম্বে ফেব্রিক্স অ্যান্ড ডাইং কারখানায় ওই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

অগ্নিকাণ্ডে তিনতলা কারখানাটির দেয়াল ও ছাদের বিভিন্ন অংশ বিকট শব্দে আশপাশের বাড়িঘর ও দোকানপাটের ওপর ধসে পড়ে। বিস্ফোরণ ও বিকট শব্দের কারণে কারখানা থেকে বেশ দূরের বাড়িঘর ও মসজিদের জানালার কাচ ভেঙে যায়।

আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ঝুঁকিপূর্ণ এ কারাখানায় এর আগেও আরো বেশ কয়েকবার অগ্নিকাণ্ডসহ নানান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে এলাকার সাধারণ মানুষ অনিরাপদ বোধ করছে। স্থানীয়দের দাবি আবাসিক এলাকা থেকে কারখানাটি যেন অপসারণ করা হয়।

অগ্নিকাণ্ডের প্রতক্ষ্যদর্শী এক যুবক (২২) এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দেখি আগুন জ্বলতেছে, পরে আমরা দৌড়াদৌড়ি কইরা আসছি। পরে এখানে আমার একটা মামাতো ভাই আছে, উনি ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিছে। পরে এই গেট লাগানো। এখন কোন দিক দিয়ে গাড়ি আসবে? পরে লোকজনের সহযোগিতায় অনেক কষ্টে এই গেট ভাঙছি। পরে লোকজন আসছে। অনেক দূর পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি হইছে। এখানে একটা বাড়ি জ্বইলাপুইড়া একদম শেষ হইয়া গেছে। তারপরে পিছনে মসজিদের গ্লাস ভাইঙ্গা গেছে। আমাদের বাসা এইখান থাইকা কত মিটার দূরে, ওইখানে পর্যন্ত আমাদের জানালা দরজার থাইগুলা ভাইঙ্গা গেছে।’

কারখানা ভবনটির পাশের বাড়ির মালিক বলেন, ‘আমার ৩০টা রুম, এর মধ্যে ২০টা ভাইঙ্গাচুইরা একদম শেষ হইয়া গেছে। জানলা-দরজা সব ভাইঙ্গাচুইরা গেছেগা। আবাসিক এলাকায় মিল-কারখানা থাকা ঠিক না। সরকারের কাছে আমরা আবেদন জানাইতেছি যাতে মিল-কারখানা এইখানে না থাকে।’

প্রত্যক্ষদর্শী আরেক ব্যক্তি (৪২) বলেন, ‘এখানে বিকট একটা আওয়াজ শুনে আমরা বের হয়ে দেখি আগুন আর আগুন। অনেকেই হতাহত হইছে। আবাসিক এলাকার মধ্যে যদি এই রকম সেফটি ছাড়া একটা ফ্যাক্টরি থাকে তাহলে আমাদের জীবনের মূল্য কী! এর আগে আমাদের এখানে লোক মারা গেছে আগুনে পুড়ে।  এইখানে ফায়ার সার্ভিস আসার কোনো সিস্টেম নাই।’

ওই এলাকার বাসিন্দা আরেক যুবক (৩৫) বলেন, ‘সকালবেলা ঘুমের থাইকা উইঠা দেখি আগুনের ধোঁয়া উঠতেছে। সামনে আইসা দেখি বিল্ডিং ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা পড়তাছে। এই বিল্ডিংয়ের বয়স হইবো অনেক বছর, কিন্তু এইটা (ঠিকঠাক) করার কোনো পদক্ষেপ নেয় নাই।’

এর আগেও এই ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ করে স্থানীয় এক মধ্যবয়সী (৪৮) বলেন, ‘এই মিলে বহুতবার ক্ষতি হইছে, এর আগেও একবার আগুন লাগছে, লাইগা মানুষ মরছে। বাড়িঘর জ্বইল্লা গেছে। এইবার আগুন লাগছে। এইটার ভিতর কী রাখে না রাখে ওরাই জানে। কয়দিন পর পরই আগুন লাগে।’

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ‘আমরা ৫টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন লাগার ম্যাসেজ পাই যে, একটা ব্রয়লার বিস্ফোরণ হয়েছে পাগলা বোম্বে ফেব্রিক্সে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের, ফতুল্লা এবং নারায়ণগঞ্জের চারটা ইউনিট, পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স, আমরা এখানে দ্রুত পৌঁছাই। আসার পর আমরা প্রায় ৪০ মিনিট চেষ্টার করে সম্পূর্ণ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি।’

‘নিয়ন্ত্রণের পর আমরা দেখলাম যে, দুইতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভবনটাই বিধ্বস্ত। এখন এটা কীভাবে হলো। ব্রয়লার সেটা এখান থেকে দূরে। বিস্ফোরণের কারণটা আমরা এখন বলতে পারছি না। আমরা এটা ইনভেস্টিগেশন করব। ভবনের যে ওয়ালগুলা ছিল, সেগুলো বিধ্বস্ত। পাশের টিনশেডগুলাও বিধ্বস্ত। ফেব্রিক্সের মালামাল যত্রতত্র পড়ে আছে। ভেতরে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না, আমাদের টিম দেখছে। এখনো আমরা তেমন কোনো কিছুর সন্ধান পাই নাই’, বলেন ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা।