পাবনায় ইছামতি দখল ও দূষণমুক্তের দাবিতে অনশন
পাবনা শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি নদী খনন করে দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবিতে মহান স্বাধীনতা দিবসে ১২ ঘণ্টার অনশন পালন করেছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের সাধারণ মানুষ। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় বিশিষ্ট সমাজসেবক দেওয়ান মাহবুবুল ইসলামের নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এই অনশনে যোগ দেন।
পরে সন্ধ্যার দিকে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স ইছামতি নদী খনন এবং দূষণমুক্ত করার আশ্বাস দিয়ে পানি পান করিয়ে অনশনকারীদের অনশন ভঙ্গ করান।
এ সময় ইছামতি নদী রক্ষার আন্দোলন কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, পাবনা শহর ও ইছামতি নদী সবার। এই নদী দিয়ে এক সময় বড় বড় স্টিমার লঞ্চ চলাচল করত। আজ সেটিতে পানি প্রবাহ না থাকায় আর দখলদারদের জন্য মড়া খালে পরিণত হয়েছে। অনেকবার চেষ্টা করেও নদীটির জন্য কোনো সুব্যবস্থা আমরা করতে পারি নাই। তবে এবার সরকারের কাছে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা পাঠিয়েছি আমরা।
সংসদ সদস্য বলেন, বিগত সরকারের আমলে নদীর নামে অর্থ বরাদ্দ করে সেটি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। আপনাদের জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমি বলতে চাই এবারে ইছামতি নদী দূষণ আর অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করে এটিকে পরিষ্কার করা হবে। এই নদীতে পানির ব্যবস্থার জন্য সরকারের কাছে আমরা লিখিত প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করছি খুব অল্প দিনের মধ্যে ইছামতি নদী খনন কার্যকম শুরু করে পাবনা শহরকে একটি আধুনিক শহরে রূপান্তর করা হবে। নদীর দুই ধার দিয়ে চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হবে। শহরকে যানজটমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন শহর করা হবে।
অনশন কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ইছামতি নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতা দেওয়ান মাহাবুবুল ইসলাম, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক এবিএম ফজলুর রহমান, ডা. আহম্মেদ তাউস লিঙ্কন, অধ্যাপক দেওয়ান আজিজুল ইসলাম, পাবনা সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান শাওয়াল বিশ্বাস, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারুক চৌধুরী, নারী অধিকারে সোচ্চার মাহবুবা কাজল, রাশিদুর ইসলাম বিটুল, পাবনা পৌর কাউন্সিলর হাবিবুর হাসান রবিন, সাংস্কৃতিক কর্মী শিশির ইসলাম, মুক্তাদির রহমান প্রমুখ।
ঐতিহ্যবাহী এই ইছামতি নদী ৪৪ কিলোমিটার যার প্রায় ১১ কিলোমিটার নদী শহরের মধ্য দিয়ে শহরতলী হয়ে পদ্মার সঙ্গে মিশেছে। এই ইছামতি নদীকে ঘিরে এক সময় এই পাবনা শহরের ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠে। আর আজ নদীর উৎসমুখ বন্ধ করে নদীর দুই পারে অবৈধ দখলদাররা গড়ে তুলেছে বাণিজ্যিক ভবন আর বসতি। পাবনার বুক জুড়ে যে কয়েকটি নদী বয়ে চলে পদ্মা, মেঘনা ও ইছামতি অন্যতম। ৪৪ কিলোমিটার ইছামতি নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা ইছামতি নদী এখন দেখে বোঝার উপায় নেই এটি নদী না খাল। মৃত ইছামতি নদীর বর্জ্য আর দূষণে পৌরবাসী আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে। মশা-মাছি আর আর্বজনায় ইছামতি নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে।
এই অনশন কর্মসূচির পর যদি কোনো ধরনের পদেক্ষেপ না আসে তবে আগামীতে ৭২ ঘণ্টার অনশনসহ আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন নদী রক্ষায় আন্দোলনরত পাবনাবাসী।