‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ আ.লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর

Looks like you've blocked notifications!
আজ বুধবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আশাশুনি উপজেলায় নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম পিন্টু। ছবি : এনটিভি

‘উপজেলা নির্বাচনে সাতক্ষীরার আশাশুনির তুয়ারডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৭টি ভোট পড়ার পর সব ব্যালট নিয়ে নিজেদের মতো করে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য কেন্দ্রে জোর করে ঢুকে একইভাবে ভোট ডাকাতি করা হয়েছে।’

আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম পিন্টু আজ বুধবার এসব অভিযোগ করেন। তিনি এই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাকেও লিখিতভাবে জানিয়েছেন বলে জানান এই প্রার্থী।  নির্বাচনের আগে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ সুপার বলেছিলেন, ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা করা হলে তাকে লাশ হয়ে ঘরে ফিরতে হবে। প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ অথবা কর্তৃপক্ষ তা প্রতিরোধের চেষ্টা করেননি। এমনকি ভোট চলাকালে বেলা ১১টায় এ অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয়নি।’

দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন আনারস প্রতীক নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এই প্রার্থী। তিনি দাবি করেন, তাঁর এজেন্টদের বের করে দিয়ে টেবিলে ব্যালট রেখে নৌকা প্রতীকে সিল মারার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি রয়েছে। মুড়ি বইতে নৌকায় সিল মারা অবস্থায় বহু সংখ্যক ব্যালট রেখে দিতে দেখা গেছে। পরে সেগুলি ভোটবাক্সে ঢোকানো হয়েছে।

পিন্টু আরো দাবি করেন, “তুয়ারডাঙ্গা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সুকুমার মণ্ডল প্রার্থী আমাকে বলেছেন, ‘নৌকার প্রার্থী মোস্তাকিমের লোকজনের চাপের মুখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সাহায্য চাইলেও তারা কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সন্ত্রাসীদের হাতে ব্যালট তুলে দিতে বাধ্য হই’।’’

ওই প্রার্থী আরো বলেন, ‘যেসব কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি হয়নি সেখানে ২৫-৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আর ভোট ডাকাতির কেন্দ্রগুলিতে ৫৫ থেকে ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দেখানো হয়েছে। উপজেলার ৭৮টির মধ্যে ৪৯টি কেন্দ্রে এ ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।’

‘ভোটকেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী এ বি এম মোস্তাকিম বাহিনীর লোকজনের এই তাণ্ডব দেখে সাধারণ ভোটাররা চোখের জল ফেলে বাড়ি ফিরে গেছেন। প্রশ্নবিদ্ধ এই ভোট বাতিল করে নির্বাচন কমিশন যেন পুনরায় ভোট গ্রহণ করে সেই দাবি জানাচ্ছি।’

এই দাবি না মানা হলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বক্তব্য এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ধারণকৃত ডকুমেন্ট নিয়ে আদালতের মাধ্যমে আইনি লড়াইয়ে নামতে বাধ্য হবেন বলে জানান পিন্টু। তিনি বলেন, আশাশুনিতে নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতা চলছে। এরই মধ্যে কয়েকজনকে মারপিট করা হয়েছে। বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। আহতরা সাতক্ষীরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এদিকে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তুয়ারডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হাড়িভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার মণ্ডল বলেন, ‘আমি ২৭টি ভোট পড়ার পর সব ব্যালট ভোট ডাকাতদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলিনি। তবে কিছু ঝামেলা হয়েছিল, ইউএনওকে জানানোর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।’

প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পিন্টু সংবাদ সম্মেলনে তাঁর মোবাইলে ধারণকৃত মুড়ি বইতে নৌকায় ভোট দেওয়ার ভিডিও দেখান। এ ছাড়া প্রিজাইডিং কর্মকর্তাও ব্যালট নৌকার প্রার্থীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা স্বীকার করার রেকর্ডও সাংবাদিকদের শুনিয়েছেন প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পিন্টু।

২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বেসরকারি ফল অনুযায়ী নৌকার প্রার্থী এ বি এম মোস্তাকিম ৭৫ হাজার ৩৪১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকের শহিদুল ইসলাম পিন্টু পেয়েছেন ৪০ হাজার ৭০৩ ভোট।

ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন

এদিকে একই দাবি নিয়ে বুধবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছেন আশাশুনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কৃষক লীগ সভাপতি স ম সেলিম রেজা।

তিনি বলেন, ‘৪৮টি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী এ বি এম মোস্তাকিম একজন প্রার্থীর সঙ্গে প্যানেল করে ভোট ডাকাতি করিয়েছেন। এ সময় কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। জোর করে সিল মারার সময় কয়েকজনকে জনগণ ধরে ফেললেও কোনো প্রতিকার হয়নি। এসব ঘটনার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ওসির কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি।’ তিনিও আশাশুনিতে পুনরায় ভোট দাবি করেন।

এ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে অসীম বরণ চক্রবর্তী ৪৪ হাজার ৭৫৪ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। অপরদিকে অভিযোগকারী স ম সেলিম রেজা পেয়েছেন সাত হাজার ২৯০ ভোট।