হাজার হাজার উৎসুক জনতা, বিব্রত উদ্ধারকর্মীরা!

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে বৃহস্পতিবার দুপুরে অগ্নিকাণ্ডের পর উৎসুক জনতার ভিড়। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

রাজধানীর বনানীতে ২২ তলা এফ আর টাওয়ারে বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে আগুন লাগে। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ঘটনাস্থলে ভিড় করতে শুরু করে হাজার হাজার উৎসুক মানুষ। এসব মানুষের মুঠোফোনে ভিডিও করা, ছবি তোলা আর আহাজারিতে ভরে ওঠে পুরো ঘটনাস্থল।

একটা সময় ঘটনাস্থলে এত বেশি মানুষের উপস্থিতি ছিল যে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, সেনাবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবীসহ অন্য যারা আগুন নেভানো বা উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ছিলেন তাদের প্রচুর ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, এসব মানুষের কারণে গণমাধ্যম কর্মীদেরও বেশ ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।

দুপুর থেকেই ঘটনাস্থলে থেকে দেখা গেছে, হাজার হাজার উৎসুক মানুষ সেখানে ভিড় জমিয়েছেন। এদের ভেতরে অনেকেই নিজেদের আধুনিক মুঠোফোনে পুরো ঘটনা ভিডিও করছেন। কেউ কেউ ছবি তুলছেন। কেউ-বা আবার আহাজারি করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। নির্দেশনাটা অবশ্য মানবিক কারণেই হয়ে থাকে বলে উদ্ধারকারীরাও তাদেরকে কিছু বলতে পারেনি।

বনানী এলাকার অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানবিক কারণেই এগিয়ে এসে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করেন। শত শত স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী রাস্তা জটলামুক্ত রাখার চেষ্টা করেও সব সময় পারেনি। কারণ সাধারণ মানুষের ভিড় এত বেশি যে এক দিক থেকে সরিয়ে দিয়ে অন্য দিকে যেতে যেতেই পূর্বের স্থান ভরাট হয়ে যায়। শেষমেশ না পেরে মাইকিং করে সরে যেতে বলেও ব্যর্থ হতে হয়েছে। আর এসব উৎসুক মানুষের কারণে গণমাধ্যম কর্মীদেরও বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কারণ গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গেই এসব উৎসুক মানুষ মিশে ছিল। একটা সময় সাধারণ মানুষের জন্য গণমাধ্যম কর্মীদেরও সরিয়ে দিতে বাধ্য হয় উদ্ধারকর্মীরা।

এসব বিষয়ে এই প্রতিবেদক উদ্ধারকর্মী এবং উৎসুক জনতার সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামতও জানার চেষ্টা করেছে। এদের ভেতরে উদ্ধারকর্মীরা বেশ বিব্রত বিষয়টি নিয়ে। তবে মানবিক বিষয় হওয়াতে তাদেরও চুপ থাকতে হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন করলে উৎসুক মানুষ বিষয়টি নিয়ে নির্বিকার ভূমিকা পালন করেছে। তাদের মত, চোখের সামনে এমন একটি ঘটনা ঘটলে ছুটে আসতেই ইচ্ছে করে! সেটা মানবিক কারণে হলেও।

এদের ভেতরে ফয়সাল হাসান নামে ফায়ার সার্ভিসের এক উদ্ধারকর্মী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আপনি নিজেই তো দেখছেন কী অবস্থা। আগুন জ্বলা থেকে সবাই আহাজারিতে লিপ্ত হয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন, একজনকে উদ্ধার করে নিচে নামালে সবাই হাত-তালি দিচ্ছেন। এসব ঘটনা আবার অধিকাংশ মানুষ ভিডিও করছেন, তুলছেন ছবিও। এতে করে আমাদের কিছু ঝামেলা হচ্ছে। যেমন, অতিরিক্ত মানুষ থাকার কারণে পাইপে করে পানি নিতে ঝামেলা হচ্ছে, উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তা ক্লিন রাখতে বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। একটু পর আবার যা তাই অবস্থা।

ফয়সাল হাসান আরো বলেন, ‘এতে করে তো আপনাদেরও (গণমাধ্যমকর্মী) ঝামেলা হয়েছে। তাদের কারণে আপনাদেরও বারবার সরিয়ে দিতে হয়েছে। এত বেশি মানুষ না থাকলে কিন্তু আমাদের পাশে থেকেই আপনারা কাজ করতে পারতেন।’

কয়েকজন উৎসুক মানুষের সাথে কথা হয় এই বিষয়ে। তাদের ভেতরে ধানমণ্ডি থেকে শুধু এই ঘটনা দেখতে ছুটে এসেছেন ওবাইদুর রহমান। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর মুঠোফোনে ঘটনার ভিডিও করছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসেছি দেখতে, মানবিক একটি ব্যাপার। খুব খারাপ লাগছে। কোন দেশে বাস করি আমরা।’

কিন্তু আপনাদেরকে থামাতে যে হিমশিম খেতে হচ্ছে উদ্ধারকর্মীদের। এটাকে কীভাবে দেখেন- এমন প্রশ্নে ওবাইদুর বলেন, ‘এসেছি একটু দেখতে। এই রকম একটি ঘটনা ঘটল, না এসে পারি কীভাবে বলেন। তবে এটা সত্য, এত বেশি মানুষ থাকলে কাজে ঝামেলা একটু হতেই পারে। কিছু মানুষের ভাবখানা এমন তারা নির্দেশনাও দিচ্ছেন।’

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস. এম জুলফিকার রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আপনারাই তো দেখেছেন ঘটনাস্থলে হাজার হাজার মানুষ। দৌড়-ঝাপ করার সুযোগ নেই। দাঁড়ানোর স্থান নেই। এসব মানুষের ভেতরে কেউ কেউ আবার আমাদেরকে দিক-নির্দেশনাও দিচ্ছেন। মানবিক কারণে তাদের হয়তো কিছু বলার থাকে না আমাদের কিন্তু তাদের কথা শুনে চলার সুযোগও তো আমাদের থাকে না। আমরা আমাদের প্লান মাফিকই কাজ করি। তবে এত বেশি মানুষ থাকার কারণে আমাদের উদ্ধারকর্মীদের ঝামেলা হয়। আমি নিজেও সে ঝামেলা ফেস করেছি। কিন্তু মানবিক সময়ে আপনি চাইলেও কাউকে কিছু বলতে পারবেন না। আপনার বিবেকই আপনাকে বাধা দেবে।’