এফ আর টাওয়ারে আগুন

ফারুকের পক্ষে আদালতে দাঁড়ালেন পুত্রবধূ পিয়া

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারের জমির মালিক প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুকের (বাঁয়ে) পক্ষে আজ রোববার আদালতে শুনানিতে অংশ নেন তাঁর পুত্রবধূ মডেল অভিনেত্রী আইনজীবী জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া।

রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারের জমির মালিক প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুকের পক্ষে আদালতে শুনানিতে অংশ নিয়েছেন মডেল ও অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। তিনি একজন আইনজীবী এবং ফারুকের পুত্রবধূ।

এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় জমির মালিক ফারুক এবং বর্ধিত অংশের মালিক কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি তাসভীর-উল-ইসলামকে আজ রোববার আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ ওই দুজনের রিমান্ডের আবেদন করে।

রিমান্ড ঠেকানোর জন্য শ্বশুর ফারুকের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী পিয়া। তবে রিমান্ড ঠেকাতে পারেননি তিনি। ফারুক ও তাসভীর উল ইসলামকে সাতদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসিন আহসান চৌধুরীর আদালতে ওই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। কাঁঠগড়ায় দাঁড়ানো ছিলেন এস এম এইচ আই ফারুক ও তাসভীর-উল-ইসলাম।

শুনানির একপর্যায়ে এস এম এইচ আই ফারুকের পক্ষে কথা বলা শুরু করেন আইনজীবী পিয়া।   

শুনানিতে পিয়া বলেন, ‘স্যার (বিচারক) আমি কি একটু কথা বলতে পারি? আমার আশপাশে অনেক লার্নেড (বিজ্ঞ) স্যারেরা আছেন। তারপরও আমার বক্তব্য হচ্ছে, আমি যদিও নিজেই এ (এফ আর টাওয়ার) বিল্ডিংয়ে অফিস করি। আমার না বলে তো উপায় নেই। এখানে পুলিশ বলেছে, ভূমি মালিক। আমরা হচ্ছি ভূমি মালিক। কিন্তু আমরা বিল্ডিংয়ের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলাম না। বিল্ডিং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল একিম অ্যাসোসিয়েশন।

ওই ভবনে প্রথমে লিফট ছিল না, আজকে লিফটেও কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। এস এইচ এম আই ফারুক তিনি নিজের টাকা খরচ করে লিফট করেছেন।’

পিয়া শুনানিতে বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালতে আরেকটি তথ্য দিয়ে রাখি। ২০০৮ সালে এই টাওয়ারে আরো একবার আগুন লাগে। সে ঘটনায় এস এম এইচ আই ফারুক বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তিনি সে সাধারণ ডায়েরিতে পরিষ্কার করে লিখেছেন, অগ্নি নির্বাপনের জন্য এখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ২০০৮ সাল থেকে আজকে ১১ বছর। ১১ বছর আগে ফারুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছিলেন, একটা বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রিমান্ড আবেদনের আরেকটা কথা বলেছে, সহ-আসামি ধরার জন্য রিমান্ড? আব্বা (শ্বশুর আব্বা) যখন, সরি এস এম এইচ আই ফারুক যখন জমিটি ডেভেলপারের কাছে দিয়ে দেন তখন আর তাঁর কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না। যদিও আমি বলব, দুজনই বয়স্ক ব্যক্তি। তাঁদের রিমান্ডে যেন না নেওয়া হয়। তাই বলব, আপনি (বিচারক) রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করবেন।’ 

এরপর ফারুকের প্রধান আইনজীবী আল মনসুর রিপন শুনানিতে বলেন, ‘আমরা ১ নম্বর আসামি ফারুকের পক্ষে রিমান্ড বাতিল পূর্বক জামিনের আবেদন করেছি। এখন রিমান্ড বাতিলের পক্ষে আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধিতে একটি ধারা আছে।’

আল মনসুর বলেন, ‘রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে- পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার এবং আগুন লাগানোর প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা এবং ১৯৯৬ সালে যে চুক্তিটা হয়েছিল রাউজকের সাথে সেটা সঠিকভাবে পালন করা হয়েছে কি না। মাননীয় আদালত, আপনাকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলতে চাই, রিমান্ড তো মাননীয় আদালত আপনি দিবেন। আবার আপনি তো নামঞ্জুর করবেন। যৌক্তিক কারণ হিসেবে আপনাকে বিবেচনায় আনতে হবে। আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তারা (পুলিশ) যে যুক্তি দেখাতে চায় এর মধ্যে আমি ভূমি মালিক। আমার নাম হচ্ছে এস এম এইচ আই ফারুক। এখন রিমান্ডে নিতে হলে জানতে হবে, ভূমি মালিক যখন কাউকে ডেভেলপ করতে দেন তখন ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তি হয়। আমরা দুটি চুক্তি করেছি। একটি চুক্তিনামা, আরেকটা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি এমন একটা জিনিস তা হলো আমার যা ক্ষমতা আছে আমি তোমাকে দিয়ে দিলাম।’

শুনানিতে আইনজীবী আল মনসুর আরো বলেন, ‘আমার (ফারুক) কিন্তু এখানে আর কোনো দায়বদ্ধতা থাকতেছে না। তুমি (ডেভেলপার) ডেভেলপ করবা, ডেভেলপ করার পরে যখন এটা ডেভেলপ হয়ে গেল, তখন ১৮তলা পর্যন্ত তার (ডেভেলপারের) সাথে আমার চুক্তি হলো।

যখন ডেভেলপ হয়ে যায় তখন সেটা ফ্ল্যাটমালিকের কাছে সবাই নিজ নিজ হিস্যা (ভাগ) বুঝিয়ে দেন। ফ্ল্যাট বুঝে পাওয়ার পর যারা থাকেন তাদের সব মালিকদের একটা সংগঠন থাকে। সে সংগঠনের ম্যানেজারের একটা পোস্ট থাকে। আগুনের যদি প্রকৃত কারণ উৎঘাটন করতে হয় তাহলে সে ম্যানেজারকে দরকার। আমি কিন্তু ভূমি মালিক আমার স্বত্ব ত্যাগ করে সব দিয়ে দিয়েছি। আমি কিন্তু একা ওই বিল্ডিংয়ের মালিক না। আমার মতো আরো ২৫ জন ১০০ স্কয়ার ফিটের দোকান কিনেছেন, তাঁরা কিন্তু জমির মালিক। তাহলে সব দায়-দায়িত্ব আমি ফারুকের উপরে দিয়ে দিলে হবে না মাননীয় আদালত।

আরেকটা বিষয় মাননীয় আদালতের কাছে সুন্দরভাবে এবং বিনয়ের সাথে বলতে চাই, রিমান্ডের মাঝে যদি যৌক্তিক কারণের মধ্যে একটা কারণ খুঁজে পাওয়া না যায় তাহলে মাননীয় আদালত রিমান্ড দিতে পারেন না। এখানে ১৮ তলার পরে ২৩ তলার বিল্ডিং হয়েছে। ১৮ তলার পর ২৩তলা মানে আরো পাঁচতলার নির্মাণের ক্ষেত্রে যদি বিল্ডিং ডেভেলপারের সাথে আমার একটাও স্বাক্ষর থাকে তাহলে আমাকে রিমান্ড দিন। সে বাকি পাঁচতলা নির্মাণে আমার সমর্থন নাই। আমি সতর্কতা দেখিয়েছি। আমি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি। এই ডেভেলপার কোম্পানি বর্ধিত পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের কাজ করছে। এর ফলশ্রুতিতে বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ এবং জনজীবন হুমকির মুখে রয়েছে।

আমি সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যথাসময়ে অবহিত করেছি। তাই আমি দায়িত্বে অবহেলা করিনি। অবহেলা যদি না থাকে তাহলে আগুন লাগার যদি প্রকৃত কারণ নির্ণয় করতে হয়, তাহলে কিন্তু ওই ম্যানেজিংয়ের দায়িত্বে যারা আছে, ডেভেলপার কোম্পানির বিল্ডিং যারা তৈরি করেছে। আমার বর্তমানে ৭৩ বছর বয়স। এ বয়স দেখিয়ে আমি বেশি সুবিধা নিতে চাই না। আমাকে যদি রিমান্ডে নেয়, মানসিক টর্চার আর হ্যারাসমেন্ট ছাড়া আর কিছু নাই। আইন মানুষের কল্যাণের জন্য। তাই আসামি ফারুকের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।’

অপরদিকে আরেক আসামি এফ আর টাওয়ারের বর্ধিত অংশের মালিক তাসভীর-উল-ইসলামের পক্ষে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী রিমান্ড শুনানিতে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘আসামি হৃদরোগে ভুগছেন। রোগী। তাঁর সব কাগজপত্র থানায় আটকানো আছে। রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসিন আহসান চৌধুরী ওই দুজনের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গতকাল শনিবার রাতেই তাসভীর-উল-ইসলাম ও ফারুককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বরে ভূমি মালিক ইঞ্জিনিয়ার ফারুক ও রূপায়ণ গ্রুপ যৌথভাবে নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। তখন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদন দেয়। কিন্তু ভবনটি ২১তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়। এরপর ২০ ও ২১ তলাটি জাতীয় পার্টির প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য মাইদুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে। মাইদুল ইসলামের কাছ থেকে ফ্লোর দুটি কিনে নেন কাশেম ড্রাইসেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএনপি নেতা তাসভীর-উল-ইসলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিনি ছাদের ওপর আরো দুইতলা নির্মাণ করে ভবনটিকে ২৩ তলা পর্যন্ত বর্ধিত করেন।