অনেক কিছুই নেই, তবু চলছে সরকারি বিদ্যালয়টি

Looks like you've blocked notifications!
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ শীলঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি : এনটিভি

ভবন নেই, নেই পর্যাপ্ত আসবাবপত্র। রয়েছে শিক্ষক সংকটও। তবু শিক্ষা বিস্তারে এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের দক্ষিণ শিলঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বাজালিয়া-পুরানগড় সড়কের সঙ্গে লাগানো বিশাল মাঠ। মাঠে খেলছিল স্কুল ড্রেসপরা কিছু ক্ষুদে ফুটবলার। মাঠের উত্তর প্রান্তে দাঁড়িয়ে লম্বা বাঁশের বেড়া ও টিনের ছাউনির একটি ঘর। পুরোনো হয়ে যাওয়ায় দেখতে অনেকটা ঝুপড়ি ঘরের মতো। ওই ঘরের পশ্চিম কোনায় লাগানো রয়েছে একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা দক্ষিণ শিলঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম। এটি যে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা বোঝানোর একমাত্র মাধ্যম সাইনবোর্ডটি। বিদ্যালয়টিতে চারটি ঘর। এর মধ্যে তিনটিতে ক্লাস হয় দুই শিফটে।

সাতকানিয়ার প্রায় সবকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একের অধিক ভবন তৈরি হয়েছে, সেখানে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন জরাজীর্ণ দৃশ্য সত্যিই বেমানান বলেই মনে করছে স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে এ প্রতিবেদক সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোবারক হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এ বিদ্যালয়টিতে ভবন নির্মাণের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো হবে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে দক্ষিণ শিলঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৩ সালে সব রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়। সেই থেকে দক্ষিণ শিলঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ও সরকারি হয়। ওই বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষকের পদ রয়েছে। কিন্তু রয়েছে চারজন। এই চারজন শিক্ষকই ২৫০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান দিয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ শীলঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা। জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন। ছবি : এনটিভি

দক্ষিণ শিলঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সাহেদ উল্লাহ আমান জানান, ১৯৯৪ সালে স্থানীয় সমাজসেবী মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী প্রায় এক একর জমি দান করে স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতায় এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।

জানা যায়, বিদ্যালয়টি হওয়ার আগে দক্ষিণে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে ছিল বৈতরণী শহীদ সোলেমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উত্তরে আড়াই কিলোমিটার দূরে ছিল শিলঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দক্ষিণ শিলঘাটার শিশুদের সেই দূরত্ব অতিক্রম করে লেখাপড়া করতে হতো। দূরত্ব বেশি হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতেন না।

কিন্তু দক্ষিণ শিলঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার কারণে ডওয়াডাপাড়া ও নাছিরের খামার এলাকার শিশুরা খুব সহজে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে পারছে। ফলে এলাকায় শিক্ষার হারও বাড়ছে। তবে সামান্য বৃষ্টি ও ঝড় হলে ক্লাস করতে পারে না শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টির পানি শ্রেণিকক্ষে ঢুকে সয়লাব হয়ে যায়। এ ছাড়া রয়েছে বেঞ্চের সংকট। শ্রেণিকক্ষ ছোট হওয়ায় চাইলেও অতিরিক্ত বেঞ্চ বসানো যাবে না। এজন্য অনেক শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়।

এ বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়কে জানানো হয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক সাহেদ উল্লাহ আমান।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ শীলঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি : এনটিভি

পুরানগড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোহাম্মদ নুরুন্নবী বলেন, বর্তমান সময়ে সারা দেশেই উন্নয়নের জোয়ার চলছে। কিন্তু সেই জোয়ারও স্পর্শ করতে পারেনি এ বিদ্যালয়টিকে। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ আর হতাশা।

পুরানগড় ইউপি চেয়ারম্যান আ ফ ম মাহবুবুল হক সিকদার বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হওয়ায় নিঃসন্দেহে এলাকাবাসী উপকৃত হচ্ছে। তাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারছে। কিন্তু বিদ্যালয়টি অবকাঠামোর দিক থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমানে পুরো সাতকানিয়ায় জরাজীর্ণ স্কুল নেই বললেই চলে। কিন্তু আমার এলাকার এ স্কুলটিতে কোনো পাকা দালান নেই। আমি অতিদ্রুত ভবন নির্মাণের জন্য এমপি মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাতকানিয়ার ইউএনও মোবারক হোসেন বলেন, এ বিদ্যালয়ের বিষয়ে আমি খবরা-খবর নিয়েছি। বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। এখন এ বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি খুব কম সময়ের মধ্যেই এ বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ করা হবে।

উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল হক জানান, ওই স্কুলে পাঁচজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও চারজন রয়েছে। আগামীতে সেখানে আরেকজন শিক্ষক দেওয়া হবে।