কারো যৌনবাসনার কাছে প্রতিবাদী নুসরাত নতিস্বীকার করেনি
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, ‘নুসরাত একটি প্রতিবাদী মানুষ। অন্যায়ের কাছে, কারো যৌনবাসনার আছে সে কোনোরকম নতিস্বীকার করেনি। আমি তাকে একটি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, প্রতিবাদী মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করতে চাই। নুসরাত নিজের জীবন দিয়ে প্রতিবাদ করে গেল।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের লাশ দেখতে এসে গণমাধ্যমের কাছে এসব কথা বলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।
পোড়া শরীর নিয়ে টানা পাঁচ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গতকাল বুধবার রাতে না-ফেরার দেশে চলে গেছেন নুসরাত। আজ ময়নাতদন্তের পর তাঁর মরদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
নুসরাত এবার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি সোনাগাজীর উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মাওলানা এ কে এম মুসা মানিকের মেয়ে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। গত ৬ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাদ্রাসা ভবনের ছাদে দুর্বৃত্তরা তাঁর গায়ে আগুন দেয়। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
নুসরাতের বই থেকে যে চিরকুট উদ্ধার হয়েছে, সেটা দেখে বোঝা যায় সে একটি প্রতিবাদী মানুষ—এমনটা উল্লেখ করে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, “আজকের দিনটা ‘নুসরাত ডে’ হিসেবে পালন করা উচিত। সে অন্যায়ের কাছে নতিস্বীকার না করে প্রতিবাদ করেছে, এটা সবার জন্য শিক্ষণীয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে সেই শাস্তি যদি মানুষের কাছে দৃশ্যমান করতে পারি, তাহলে আজকে মানুষের মনে যে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা যাবে।”
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘নারীর প্রতি, শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে, এটা সমাজের জন্য ব্যাড মেসেজ দিচ্ছে। মানুষ একটা শঙ্কার মধ্যে বসবাস করছে। আমরা জানি না, কে কখন এই জাতীয় ঘটনার শিকার হয়ে যাব। এটার একটা পরিসমাপ্তি হওয়া উচিত।’
‘দুঃখজনক হচ্ছে, আমাদের দেশে অনেক আইন আছে; কিন্তু তা সত্ত্বেও দিন দিন এসব বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে হচ্ছে না। মানুষ সঠিকভাবে তার বিচার পাচ্ছে না। যার ফলে অপরাধী দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টের জন্য একটা আইন করার দাবি দীর্ঘদিনের, সেই দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।’
নুসরাতের পরিবারের অভিযোগ, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহানের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। নুসরাত বিষয়টি বাসায় জানালে তাঁদের মা সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে। এরপর মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় অধ্যক্ষের লোকজন। কিন্তু নুসরাত অপারগতা প্রকাশ করেন।
নুসরাতকে গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে অধ্যক্ষসহ কয়েকজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
কমিশনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘একটা জিনিস খুব দুঃখজনক, নুসরাতের মৃত্যুর জন্য যাকে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাকে যখন রিমান্ড থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তার মুখে কোনো অনুশোচনা বা ভীতি দেখতে পেলাম না। তার মানে, অপরাধীর মনের মধ্যে এখনো দাগ কাটতে পারে নাই। এটাই আমাদের জন্য দুঃখজনক। অপরাধীরা যদি ভীত হতো, তাহলে অপরাধ করার আগে চিন্তা করত।’