নুসরাত হত্যা : সিরাজ উদ দৌলার ‘ঘনিষ্ঠ’ শামীম-জাবেদ গ্রেপ্তার

Looks like you've blocked notifications!
ফেনীর সোনাগাজীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম (বায়ে) এবং জাবেদ হোসেনকে (ডানে) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার আসামি ও অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার ঘনিষ্ঠ শাহাদাত হোসেন শামীম এবং জাবেদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনীর পরিদর্শক মোনায়েম আজ শনিবার সকালে এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, ‘গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে শামীমকে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার একটি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে ফেনীতে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানি। এ ব্যাপারে আমরা আর কিছু জানি না।’  

এ দিকে পিবিআই ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা এলাকা থেকে শাহাদাত হোসেন শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি রাফি হত্যায় দায়ের করা মামলার তিন নম্বর এজহারভুক্ত আসামি।’

মুক্তাগাছার স্থানীয় ব্যবসায়ী মনোনেশ দাস জানান, জনতা গেস্ট হাউজটি তাদের পৈত্রিক ব্যবসা। শুক্রবার রাতে হোটেলের বোর্ডার এন্ট্রি খাতায় শাহাদাতের নাম-ঠিকানায় অসঙ্গতি দেখে হোটেলের একজন স্টাফের মোবাইলের মাধ্যমে আসামি শাহাদাতের সঙ্গে কথা বলে তাঁর সঠিক পরিচয় পান। পরে তিনি পুলিশকে খবর দেন।

অপরদিকে নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার আরেক আসামি জাবেদ হোসেনকে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফেনী শহরের রামপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা।

ফেনী পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান জানান, নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার পাঁচ নম্বর আসামি জাবেদ হোসেন। তিনি জেলার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্র।

এর আগে শুক্রবার সকালে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার আরেক ঘনিষ্ঠ এবং ওই মাদ্রাসার ফাজিলের ছাত্র নুর উদ্দিনকে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নুসরাতের ভাই নোমানের দায়ের করা হত্যা মামলার আসামিরা হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলা, ইংরেজির প্রভাষক আবছার উদ্দিন, মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নুর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, শাহাদাত হোসেন শামীম নিজেকে ছাত্রলীগের মাদ্রাসা শাখার সভাপতি হিসেবে দাবি করতেন। তবে এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ সাতদিনের রিমান্ডে আছেন। সেই সঙ্গে প্রভাষক আবছার, নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নুর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, অধ্যক্ষ সিরাজের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি ও আরেক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী জোবায়ের আহমেদের পাঁচদিনের রিমান্ড চলছে। এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে হাফেজ আবদুল কাদের এখনো পলাতক আছেন।

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনা শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় নুসরাতকে গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাত গত বুধবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে মারা যান।

এর আগে ২৭ মার্চ নুসরাতকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজ। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই দিনই অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।