বলীখেলা ও মোরগ লড়াইয়ে মুখর চট্টগ্রামের বর্ষবরণ
বর্ষবরণকে ঘিরে এবারো বলীখেলা ও মোরগ লড়াইসহ নানা আয়োজনে মুখর হয়ে ওঠে দেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম।
নগরীর সিআরবি শিরীষতলায় অনুষ্ঠিত হয় সাহাবউদ্দীনের বলীখেলা। এতে যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার শাহজালাল বলী ও কক্সবাজারের বাদশা বলী। এ ছাড়া সিলেট, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে আনা মোরগ লড়াইয়ে জমজমাট হয়ে ওঠে রেলওয়ে স্কুলের মাঠ।
বাংলা নববর্ষের শুরুর দিন পয়লা বৈশাখে চট্টগ্রামের সিআরবি শিরীষতলায় গত একদশক ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে সাহাবউদ্দীনের বলীখেলা। মাঠের ওপর বাঁশ দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয় কুস্তি প্রতিযোগিতার মাঠ। গ্রাম বাংলার লোকজ এ খেলা উপভোগ করতে জড়ো হয় হাজারো নগরবাসী।
বলীখেলায় শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সের প্রায় ৬০ জন বলী অংশ নেন। বলীদের বাউট দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন খেলা দেখতে আসা দর্শকরা। আর দীর্ঘ সময় লড়াইয়ের পর যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার মো. শাহজালাল বলী ও কক্সবাজারের মো. বাদশা বলী।
নগরীর সিআরবি শিরীষতলায় সাহাবউদ্দীনের বলীখেলার বিশেষ মুহূর্ত। ছবি : এনটিভি
কুমিল্লার মো. শাহাজালাল বলী বলেন, ‘আমাদের গ্রাম বাংলার খেলা কুস্তি। আমাদের গ্রামেও এটা হয়। এখানে খেলা যদি হয়, প্রতিবছই আমি এখানে আসব এবং খেলায় অংশ নেব।’
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা মো. বাদশা বলী বলেন, পাঁচ বছর ধরে আমি এখানে আসি। এইবারই প্রথম আমি চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
বলীখেলার উদ্যোক্তা মো. সাহাবউদ্দীন বলেন, বাঙালি সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য আমি বলীখেলা চালু রেখেছি। স্বাধীনতার পর থেকে কোনো প্রশিক্ষণ নেই। যে খুশি বলী ধরে। প্রশিক্ষণের জন্য ‘সাহাবুদ্দিন কুস্তি একাডেমি’ নামে সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করায় চট্টগ্রাম সিটি মেয়রকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
খেলা শেষে বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট ও অর্থ তুলে দেন সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী ও দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক।
এ সময় নতুন বাংলা বছর ও বৈশাখকে বরণ ও বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে এ খেলার আয়োজন ও ভবিষ্যতে প্রশিক্ষিত বলী তৈরিতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্যানেল মেয়র।
বর্ষবরণের দিনে মোরগ লড়াইয়ে জমজমাট হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের রেলওয়ে স্কুলের মাঠ। ছবি : এনটিভি
অন্যদিকে এনায়েত বাজার রেলওয়ে স্কুলের মাঠে আয়োজন করা হয় মোরগ লড়াই। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা প্রতিযোগী মোরগদের লড়াই জমে ওঠে পুরো এলাকা। দর্শকদের আনন্দ ও সুস্থ বিনোদন দেওয়াই এই লড়াইয়ের প্রধান উদ্দেশ্য বলে জানান আয়োজকরা।
মোরগ লড়াইয়ের আয়োজক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সলিমুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এসব খেলার কারণে যুব সমাজের সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটে। তারা মাদক ও অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকে।
মোরগ লড়াইয়ের অন্যতম আয়োজক মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলা নববর্ষে মানুষকে সুস্থ বিনোদন দেওয়ার উদ্দেশে এই খেলার আয়োজন করে থাকি আমরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিটি আচিল ক্লাব ও চট্টগ্রাম আচিল ক্লাবের মধ্যে মোরগ লড়াই অনুষ্ঠিত হলো। এর মধ্য দিয়ে কিছু বেকার যুবকের কর্মসংস্থানও হয় বলে জানালেন মোজাম্মেল।