মন জয় করলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!
ঢাকায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। ছবি : সংগৃহীত

তিনি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। পয়লা বৈশাখের দুটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। পরিষ্কার বাংলা ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন, হাসিয়েছেন, আবেগ দেখিয়েছেন আর দিয়েছেন পরিশ্রম করার উৎসাহ।

এবার দেশের পয়লা বৈশাখকে ভিন্নভাবে রাঙালেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। আর জয় করলেন বাংলাদেশের মানুষের মন।  

বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে চ্যানেল আই সুরের ধারা আয়োজিত ‘লিভার আয়ুশ হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ ১৪২৬’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮তম ব্যাচের ছাত্র লোটে শেরিং ১৯৯১ সালে বিদেশি কোটায় এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৯৯ সালে এমবিবিএস পাস করে তিনি ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।

লোটে শেরিং ২০১৩ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটি তাঁর প্রথম বাংলাদেশ সফর। বন্ধুদের সঙ্গে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের লক্ষ্যে ২০ বছর পর তিনি ময়মনসিংহে যান।

‘আপনার পান্তাভাত খাইয়েছেন?’

পয়লা বৈশাখের দিন সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে লোটে শেরিং বাংলায় বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে আমার মন থেকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনার পান্তাভাত খাইয়েছেন? আমি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর ঢাকায় এফসিপিএস করেছি। আসলে আমার মন উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত অনুভব করছে কখন ময়মনসিংহ যাব।’

বাঘমারা মেডিকেল ছাত্রাবাসের ২০ নম্বর কক্ষ

পরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহ যান। প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে ময়মনসিংহে পৌঁছালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাঁকে স্বাগত জানান। সেইসঙ্গে সাবেক সহপাঠীরা তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন। পরে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভালো চিকিৎসক হতে হলে প্রথমে ভালো মানুষ হতে হবে।’

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষাজীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘১৯৯১ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আমি ও আমার সহপাঠী ভুটানের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. টান্ডি দরজি ময়মনসিংহ শহরের বাঘমারা মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসের ২০ নম্বর কক্ষে থেকেছি। এখনো একসঙ্গে আমরা রাজনীতি করছি। এ দীর্ঘ সময়ে আমাদের মধ্যে কোনোদিন কোনো মনোমালিন্য হয়নি। আজকে তাঁর কারণেই আমি প্রধানমন্ত্রী, তিনিই আমাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন।’

লোটে শেরিং বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে এসেছি আমার পেশাকে ছেড়ে নয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমি চাকরি না করে, বিদেশে না গিয়ে ভুটানের মানুষকে নিয়ে ভেবেছি। তাদের নিয়ে কাজ করেছি। আজ আমি সে দেশের প্রধানমন্ত্রী।’

শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন সময়ের ঘটনা নিয়ে অনেকের নাম উল্লেখ করে লোটে শেরিং আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. টান্ডি দরজি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী লায়োনপু দিহেন ওয়াংমু, প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী ডা. উগেন ডেমা, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।