ফ্রান্সের নিম্নমানের গম চট্টগ্রামে খালাস

Looks like you've blocked notifications!
ফ্রান্স থেকে পচা গম নিয়ে মংলা বন্দর এলাকায় অবস্থান করছে এমভি পিনটেল জাহাজ। ফাইল ছবি : এনটিভি

এমভি পিনটেল নামের জাহাজের মাধ্যমে ফ্রান্স থেকে আমদানি করা গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী নয়। বিষয়টি তদন্ত শেষে আজ বুধবার গম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে লিখিতভাবে জানিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, জাহাজে থাকা বাকি ২১ হাজার টন গম মংলায় খালাস করবে না অধিদপ্তর। কিন্তু এর আগেই কোনো পরীক্ষা ছাড়াই একই জাহাজ থেকে ৩১ হাজার ৫০০ টন গম চট্টগ্রামে খালাস করা হয়েছে।  

পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে এমভি পিনটেল নামক সাইপ্রাস পতাকাবাহী জাহাজটি ফ্রান্স থেকে ৫২ হাজার ৫০০ টন গম নিয়ে বাংলাদেশে আসে। এমভি পিনটেলের স্থানীয় এজেন্ট লিডমন্ড শিপিং এজেন্টের পরিচালক আক্তার হোসেন জানান, গম বোঝাই জাহাজটি পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

গত ১৩ অক্টোবর মংলা বন্দরে আমদানি করা গম খালাস তদারকি কমিটির আট সদস্য জাহাজটির গম পরীক্ষা করে এবং নমুনা সংগ্রহ করে। এই কমিটি আমদানি করা গম নিম্নমানের ও পচা বলে অভিমত দিলেও ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে গমের নমুনা ঢাকায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।

গত ১৮ অক্টোবর গম খালাস তদারকি কমিটির আহ্বায়ক ও খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী নূরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে জানান, এসব গম মানবদেহের জন্য উপযোগী নয়। তবে পশু বা মাছের খাদ্যের জন্য অন্যরা এই গম নিতে পারে।

গম খালাস তদারকি কমিটির অন্যতম সদস্য একরামুল হক আজ বুধবার বিকেলে এনটিভি অনলাইনকে জানান, ঢাকায় নমুনা পরীক্ষার পরও তাঁদের সিদ্ধান্ত বহাল আছে। খাদ্য অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই গম খালাস করা হবে না।

এ ব্যাপারে লিডমন্ড শিপিং এজেন্টের খুলনা কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক সৈয়দ মুরতজা আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে লাইন কেটে দেন। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি  বাইরে আছেন বলে জানান।

ঊর্ধ্বতন মহলের রোষানলে?

এমভি পিনটেল জাহাজের মাধ্যমে নিম্নমানের গম আসার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় খুলনার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ওপর নাখোশ হয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রেখেও কথা বলেননি খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী নজরুল ইসলাম। এই সময় তাঁর দপ্তর থেকে বলা হয়, মংলায় আসা পচা গমের ব্যাপারে কথা বলায় তিনি ঊর্ধ্বতন মহলের রোষানলে পড়েছেন।

আজ বুধবার কাজী নজরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, যেসব সংবাদপত্রের প্রতিনিধির সঙ্গে তিনি কথা বলেননি সেসব পত্রিকায় তাঁর বরাত দিয়ে যে খবর প্রকাশ হয়েছে তাতে তিনি বিব্রত। তিনি জানান, এই কারণে কারো সঙ্গে কথা বলছেন না তিনি। এমভি পিনটেল জাহাজে করে আমদানি করা গম খালাসের ব্যাপারে আগের সিদ্ধান্ত বহাল আছে বলে জানান। তিনি জানান, তাঁদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে খাদ্য অধিদপ্তরের নমুনা পরীক্ষায় একই প্রতিবেদন এসেছে। তিনি আবারও জানান, এই এমভি পিনটেলের ২১ হাজার ৫০০ টন গম খালাস করা হবে না।

বাজারে নিম্নমানের গম?

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এমভি পিনটেল নামক জাহাজটি ফ্রান্স থেকে ৫১ হাজার ৫০০ টন গম নিয়ে বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করেছিল পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে। কিন্তু ব্রাজিল থেকে আনা পচা গম নিয়ে দেশে হৈ চৈ শুরু এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে জাহাজটি দীর্ঘদিন গম খালাস করতে পারেনি। এদিকে সম্প্রতি দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার পর চট্টগ্রাম থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিদেশি বিশেষজ্ঞ ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে যায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গম আমদানিকারক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার ইমপেক্স কনসালট্যান্ট লিমিটেড প্রভাব বিস্তার করে পিনটেল জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পুনরায় ভিড়িয়ে ৩১ হাজার ৫০০ টন গম খালাস করে। পরে জাহাজটি বাকি ২১ হাজার টন গম নিয়ে গত ১২ অক্টোবর মংলা বন্দরে প্রবেশ করে— যা নিম্নমান ও পচা হিসেবে পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হওয়া ৩১ হাজার ৫০০ টন নিম্নমানের গম বাজারে চলে এসেছে।

এ বিষয়ে এমভি পিনটেল জাহাজের স্থানীয় এজেন্ট লিডমন্ড শিপিং প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সৈয়দ মুরতজা আলী বাপ্পী এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, যে গম চট্টগ্রামে খালাস হতে পারে সেই একই গম মংলায় খালাস হতে দোষের কী আছে।  তিনি কিছু গমের নমুনা দেখিয়ে বলেন, গমে একটু ডাস্ট বেশি। তবে অনুপযোগী নয়।