নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বললেন মওদুদ
আইনি প্রক্রিয়ায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব না হলে আন্দোলনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এজন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের বার কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে এক দোয়া ও আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মওদুদ। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, শারীরিক সুস্থতা ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়ার আশু রোগ মুক্তি কামনায় ওই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
ব্যারিস্টার মওদুদ অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক কারণে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনকে, তাঁর জামিনও রাজনৈতিক কারণে হচ্ছে না। দেশে বিরোধী দলের জন্য আইনের প্রয়োগ এক ধরনের আর ক্ষমতাসীনদের জন্য আরেক ধরনের বলে অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু খালেদা জিয়া আপসে বিশ্বাস করেন না মন্তব্য করে মওদুদ বলেন, শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও এখনো মানসিকভাবে দৃঢ় রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, বেগম জিয়া যে মামলায় কারাবন্দি এটা সম্পূর্ণ একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা। তার সাথে যা কিছু করা হচ্ছে, যত প্রকার অবিচার করা হচ্ছে, সেগুলো সবই রাজনৈতিক। রাজনৈতিক কারণেই বেগম জিয়ার মুক্তি হচ্ছে না। আইনি প্রক্রিয়ায় যদি বেগম জিয়ার জামিন না হয় এবং তাঁকে মুক্তি করতে না পারি তাহলে অবশ্যই আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করা হবে ইনশা আল্লাহ!
দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, বেগম জিয়া তিনবার রাষ্ট্রপরিচালনা করেছেন এবং তিনি সঠিকভাবেই গণতন্ত্রের চর্চা করেছেন। তিনি দেশের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একজন নেত্রী। কিন্তু বর্তমানে দেশের সংবিধান এবং গণতন্ত্র দুটোই বিপন্ন।
জমির উদ্দিন সরকার বলেন, খালেদা জিয়াকে যেসব মামলায় জড়িয়ে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে এগুলো জামিনযোগ্য মামলা। সুতরাং সরকার রাজনৈতিকভাবে যদি তাঁকে আটকে না রাখে তাহলে তাঁর মুক্তিতে কোনো বাধা থাকবে না।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বার কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণমানুষের নেত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭ টি মামলা। ১/১১ এর সময় বেগম জিয়া এবং শেখ হাসিনা দুজনের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছিল। কিন্তু সেটা তাঁর (শেখ হাসিনা) নিজস্ব ক্ষমতা বলে প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো আর বেগম খালেদা জিয়ার মামলায় তিনি আজ জেলে।
জয়নাল আবেদীন বলেন, সংসদ যাওয়া না যাওয়ার সঙ্গে বেগম জিয়ার মুক্তির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যেটা মানুষ বলেছে, সেটা সরকারের কোনো মহল থেকে সৃষ্টি একটা গুজব। বেগম জিয়া যদি সুস্থ হন এবং বাঁচেন তাহলে দেশ বাঁচবে। আর যদি তিনি সুস্থ না হন এবং মুক্তি না পান তাহলে অসুস্থ দেশ অসুস্থই থেকে যাবে।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সরকার বেগম জিয়ার সাথে একটা অমানবিক অচরণ করেছেন। ৭০ বছর বয়সী এমন একজন অসুস্থ মানুষকে সরকার মেরে ফেলার জন্য বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেলে আটকিয়ে স্বৈরাচারীভাবে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। জনগণকে বাঁচাতে হলে এবং দেশকে বাঁচাতে হলে দুর্বার আন্দোলন করে বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এজন্য দেশের মানুষকে আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে। সরকার বেগম জিয়াকে ভয় পায় বলেই কারারুদ্ধ করে রেখেছে।
দোয়া মাহফিলে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খোরশেদুল আলমগীর, নারায়ণগঞ্জ বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, জুলফিকার আলী ঝুনু, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তারসহ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ।