‘ভালো থাকবেন প্রিয় শিল্পী, প্রিয় মানুষ’

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় আজ ভোর সাড়ে ৪টায় মারা যান বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছে পুরো দেশবাসী এবং বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্পীরাও।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সুবীর নন্দীকে স্মরণ করে অভিনেতা সাজু খাদেম লিখেছেন, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়, তবু কেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়। কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী চলে গেলেন।’
চঞ্চল চৌধুরী বলেন, “অনেক বড় একটা ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের। কী লিখব সুবীরদাকে নিয়ে? অনেক আবেগতাড়িত হচ্ছি বারবার। চোখটা ভিজে যাচ্ছে। এই তো কয়েক দিন আগে, বাংলাভিশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দাদার সঙ্গে দেখা হলো। দাদার সঙ্গে ছোট ছোট স্মৃতি। দেখা হলেই ‘কেমন আছো চঞ্চল?’ আর কখনো দেখা হবে না সুবীরদার সঙ্গে। হবে না কোনো কথা। আমাদের মাথার ওপর থেকে ছাদগুলো ক্রমশ সরে যাচ্ছে এভাবেই। ক্ষণজন্মা এই শিল্পীর অভাব পূরণ হওয়ার নয়। আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের গানে, মনে, প্রাণে। শত সহস্র বছর। ভালো থাকবেন দাদা। বিনম্র শ্রদ্ধা।”
নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী বলেন, ‘সুবীর কাকা, আপনি চলে গেলেন। আপনিও? আমার সিনেমার গানটা গাওয়া হলো না। একজন নক্ষত্রের পতন।’
সংগীতশিল্পী শারমিন সুলতানা সুমি বলেন, ‘এ এক অপূরণীয় ক্ষতি। ভালো থাকবেন প্রিয় শিল্পী, প্রিয় মানুষ।’
সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর বলেন, ‘শান্তিতে থাকুন প্রিয় সুবীর দাদা।’
গীতিকবি কবির বকুল বলেন, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খিরে, যা যা তুই উড়াল দিয়া যা। সুবীর দাদা, আপনি চলে গেলেন! না-ফেরার দেশে!’
অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি বলেন, ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো, সে কথা তুমি যদি জানতে, এই হৃদয় ছিঁড়ে যদি দেখানো যেত, আমি যে তোমার তুমি মানতে। বাংলাদেশে সুরের ঐশ্বর্য নিয়ে আপনি ঘুমিয়ে গেলেন! কীর্তিমানের মৃত্যু নাই। আপনি সারা জীবন বেঁচে থাকবেন আপনারই স্বর্গীয় সুরের ধারায়! বিনম্র শ্রদ্ধা।’
অন্যদিকে নির্মাতা হাসিবুর রেজা কল্লোল বলেন, ‘এত নিরহংকারী এবং আন্তরিক মানুষ বিরল। ওপারে ভালো থাকবেন সুবীর নন্দী। বাংলা গানে আপনার শূন্যতা কোনোদিন পূরণ হবে না।’
সংগীতে অবদানের জন্য এ বছরই সুবীর নন্দীকে একুশে পদকে ভূষিত করে সরকার। বেতার, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রের প্লেব্যাকে তাঁর অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে। চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের জন্য চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি।
গত ১২ এপ্রিল শ্রীমঙ্গলে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন সুবীর নন্দী ও তাঁর পরিবার। পয়লা বৈশাখে শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকা ফেরার পথে উত্তরায় কাছাকাছি আসতেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে সুবীর নন্দীর। এরপরই তাঁকে সেখান থেকে সরাসরি সিএমএইচে নেওয়া হয়। সিএমএইচে চিকিৎসাধীন থাকার সময় গত ৩০ এপ্রিল সুবীর নন্দীকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয় ।
দেশের জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পীর ১৯৮১ সালে প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ প্রকাশ হয়। ১৯৭৬ সালে ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে প্রথম প্লে-ব্যাক করেন তিনি। দীর্ঘ ৪০ বছরের সংগীত ক্যারিয়ারে আড়াই হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন তিনি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার। সংগীতে অবদানের জন্য এ বছর তিনি পান দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক।
সুবীর নন্দীর গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো ‘ও আমার উড়াল পঙ্খী রে’, ‘কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়’, ‘চাঁদে কলঙ্ক আছে যেমন’, ‘বধূ তোমার আমার এই যে পিরিতি’ ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’ , ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘আশা ছিল মনে মনে’ ইত্যাদি।