চাকরি-বেতন কিছুই নেই, বাচ্চার জন্য দুধ চুরি!

Looks like you've blocked notifications!
দুধ খাচ্ছে এক শিশু। ফাইল ছবি : রয়টার্স

তিন মাস ধরে চাকরি নেই, নেই বেতনও। সংকটের সংসার। কিন্তু ঘরে ফুটফুটে একটি শিশু। ক্ষুধায় চিৎকার করে সন্তান। চোখের সামনে সেই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে একটি সুপার শপ থেকে দুধ চুরি করতে বাধ্য হন শিশুটির বাবা।

তবে এই চুরি করতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। শিশুটির বাবার চুরি ধরা পড়ে জনসাধারণের হাতে। খান মারধর। আমজনতা তাঁকে টেনেহেচড়ে নিয়ে যান ঢাকা মহানগর পুলিশের খিলগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) জাহিদুল ইসলামের কাছে।

ঘটনাটি গতকাল শুক্রবার রাতের। খিলগাঁওয়ে সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের সামনে শহীদ বাকি সড়ক এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। আমজনতা ও চুরির দায়ে অভিযুক্ত শিশুটির বাবার কাছ থেকে পুরো ঘটনা শোনেন এসি জাহিদুল। সাধারণ মানুষ এসিকে জানালেন, ‘স্বপ্ন সুপার শপ থেকে লোকটি এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিলেন।’

সামান্য এক প্যাকেট দুধ চুরি করে ধরা খেলেন লোকটি। বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর হবে। তাঁকে দেখতেও ভদ্র মনে হয় পুলিশ কর্মকর্তার। তাঁর কাছ থেকেও ঘটনা জানতে চান জাহিদুল ইসলাম।

চুরি করলেন কেন-এমন প্রশ্ন জানতে চাইলে লোকটি কাঁদতে কাঁদতে জাহিদুল ইসলামকে বললেন, ‘স্যার, তিনমাস হলো চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই। তাই চুরি করছি। বাচ্চাকে তো বাঁচাতে হবে? কি করবো বলেন?’

শনিবার সন্ধ্যায় সহকারী কমিশনার (এসি) জাহিদুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে এসব কথা জানান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের খিলগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কের চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। এমতাবস্তায় একটি স্থানে কিছু লোক হট্টগোল করতে দেখলাম। তখন একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) পাঠালাম ঘটনাস্থলে। কিছু লোক একজনকে টেনেহেচড়ে আমার কাছে নিয়ে এলো। ঘটনার বিস্তারিত শুনলাম। লোকটিকে টেনেহেচড়ে এনে শক্ত করে ধরে রাখা একজন সিকিউরিটি গার্ড বললেন, ‘লোকটি সুপার শপ থেকে এক প্যাকেট ন্যান দুধ চুরি করে পালাচ্ছিলেন।’

তবে অভিযুক্ত লোকটি বললেন, ‘তিন মাস ধরে চাকরি নেই। কাছে টাকা নেই। ঘরে শিশু বাচ্চা আছে। তাই নিজের সন্তানকে খেতে দেওয়ার জন্য দুধ চুরি করেছি।’

এসি জাহিদুল ইসলাম আরো বলেন, ‘তখনই আমার নিজের সন্তানের কথা মনে পড়ল। আমি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের প্যাকেটের দাম কত? তখন সে বললো, ৩৯০ টাকা। আমি তাঁকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম।’

পরে ওই ঘটনার বিস্তারিত নিজের ফেসবুকে লিখে পোস্ট করেন বিসিএস ৩৩ ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম। এরপর ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পরে ওই লোককে চাকরি দেওয়ার জন্য স্বপ্ন সুপার শপ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তারা আমার অফিসেও এসেছিলেন নিয়োগপত্র নিয়ে। আমি লোকটাকেও আসতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি আসেননি। তাঁর ফোনও বন্ধ। না আসার দুটো কারণ হতে পারে। এক, ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় তিনি লজ্জা পেতে পারেন। দ্বিতীয়, এই ধরনের কাজ করার পরে পুলিশ তাঁকে আবার ডেকেছে। তিনি এতে ভয়ও পেতে পারেন। তবে আমি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’