নকলের সুযোগ না দেওয়ায় প্রভাষককে লাথি-কিলঘুষি!

Looks like you've blocked notifications!
নকলের সুযোগ না দেওয়ায় পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. মাসুদুর রহমানের ওপর হামলা চালানো হয়। ছবি : সংগৃহীত

নকলের সুযোগ না দেওয়ায় পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. মাসুদুর রহমানকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। ৩৬তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারের এ প্রভাষককে লাথি ও কিলঘুষি মেরে চরম অপদস্থ করা হয়।

গত ১২ মে এ ঘটনা ঘটে। কলেজের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় শারীরিক লাঞ্ছনার দৃশ্য ধরা পড়েছে। ওই ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টি মঙ্গলবার রাতে জানাজানি হয়।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কলেজ গেট থেকে মোটরসাইকেলে করে বের হওয়ার সময় কয়েকজন যুবক এসে অতর্কিত শিক্ষক মাসুদুর রহমানের ওপর হামলা চালায়। তাঁকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও থাপ্পড় মারা হয়। ফেলে দেওয়া হয় মাথার পাগড়িও। একপর্যায়ে তিনি বেরিয়ে যেতে চাইলে পেছন থেকে এসে তাঁকে লাথি মারে এক যুবক।

ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর একজন শিক্ষকের ওপর এ ধরনের হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন অনেকেই। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন প্রিয় এ শিক্ষকের ছাত্রছাত্রীরা।

শিক্ষক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘গত ৬ মে এইচএসসি পরীক্ষায় সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী দেদারছে নকল করছিল। এ জন্য আমি দুই ছাত্রীর খাতা কেড়ে নেই। এরপর থেকে ওই দুই ছাত্রীর ঘনিষ্ট কয়েকজন ছাত্র আমার নামে নানা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আসছে। মূলত নকল ধরার জন্যই তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে।’

শিক্ষক বলেন, ‘গত ১২ মে দুপুরে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী আমার ওপর হামলা চালায়। আমাকে কিল-ঘুষি মারে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় আমার মাথার পাগড়ি খুলে পড়ে। এ ছাড়া পেছন থেকে সজোরে লাথি মারে। সে সময় আমাকে বলা হয়, ‘তুই আর কলেজে আসবি না। কলেজে এলে তোর হাত কেটে নেব। বাংলা বিভাগে আগুন ধরিয়ে দেব।’ এরপর আমার সিনিয়র শিক্ষকরা এগিয়ে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন এবং আমাকে বাড়ি চলে যেতে বলেন। এরপর থেকে আমার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমাকে কিছুদিনের জন্য কলেজে যেতে মানা করেছেন শিক্ষকরা।’

এ ব্যাপারে সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শামসুদ্দিন আহমেদ জন্নুন বলেন, ‘শিক্ষক মাসুদুর রহমান কলেজের এক ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। সে প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই শিক্ষক নানাভাবে ওই ছাত্রীকে যৌন হেনস্তা এবং হয়রানি করে আসছেন। গত ১২ মে যারা হামলা করেছেন, তারা ছাত্রলীগের কেউ নন, তারা বিক্ষুব্ধ। আমি নিজে এসে ক্ষুব্ধ ছাত্রদের নিবৃত্ত করেছি এবং ধমক দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে গেছি।’

সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যক্ষ এম এ কুদ্দুস বলেন, এই ঘটনায় সহযোগী অধ্যাপক ড. কৃষ্ণেন্দু কুমার পালকে প্রধান করে এবং ড. ইসমত আরা ও সহকারী অধ্যাপক হারুনুর রশিদসহ কলেজের কর্মচারী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিয়ে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক জানান, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রভাষক মাসুদুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর ৩৬তম বিসিএসের মাধ্যমে যোগ দেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে।