সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারীদের মানববন্ধন

Looks like you've blocked notifications!
সাতক্ষীরার দেবহাটা কেবি আহসানউল্লাহ সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি মো. ফয়জুল্লাহর বিরুদ্ধে মাদক, ইভ টিজিং, চাঁদাবাজি ও শিক্ষকের প্রতি অশোভন আচরণের অভিযোগে আজ মঙ্গলবার মানববন্ধন করেছেন কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। ছবি : এনটিভি

সাতক্ষীরার দেবহাটা কেবি আহসানউল্লাহ সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি মো. ফয়জুল্লাহর বিরুদ্ধে মাদক, ইভ টিজিং, চাঁদাবাজি ও শিক্ষকের প্রতি অশোভন আচরণের অভিযোগে এনে মানববন্ধন করেছেন ওই কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ ছাড়া সংগঠন থেকে ফয়জুল্লাহর বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে শাস্তিও চেয়েছেন তাঁরা।

আজ মঙ্গলবার সকালে দেবহাটা কেবি আহসানউল্লাহ সরকারি কলেজে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

অভিযুক্ত ফয়জুল্লাহ কেবি আহসানউল্লাহ সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।

এ কর্মসূচির পর অভিযুক্ত ফয়জুল্লাহ ফোন করে হুমকি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। তিনি কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের দেখে নেবেন বলে শাসিয়েছেন।

দেবহাটা কেবি আহসানউল্লাহ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ফয়জুল্লাহ অনেক দিন ধরে কলেজের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইভ টিজিং, বারবার চাঁদাবাজি, মাদক গ্রহণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং কলেজে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে। কয়েকদিন আগে ফয়জুল্লাহ অভিষেকের নাম করে শিক্ষকদের কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন। এরপর আরো ১৫ হাজার টাকা দাবি করতে থাকেন তিনি। তবে আমরা আর টাকা দিতে স্বীকৃত হইনি।’

অধ্যক্ষ আরো জানান, গত সোমবার কলেজে এসে ফয়জুল্লাহ অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে তাঁকে বলেন, ‘আঙ্কেল আপনারা প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে কত টাকা নিচ্ছেন?’ অধ্যক্ষ এ বিষয়ে ফয়জুল্লাহকে ভাইস প্রিন্সিপালের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিতেই ফয়জুল্লাহ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এ সময় তিনি অধ্যক্ষকে উদ্দেশ করে বলেন ‘এই তুই সব জানিস, বল। তুই জবাব দিবি। এই কার কাছে যাব রে। তুই তো শয়তানের গোড়া।’ ফয়জুল্লাহ এ সময় অধ্যক্ষসহ দুজনকে মারধর করার হুমকি দেন।

রিয়াজুল ইসলাম জানান, এমন সব কটূবাক্যে তিনি চরমভাবে অপমানিত হন। শিক্ষকরা ফয়জুল্লাহকে বলে কয়ে অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বের করে দেন।

অধ্যক্ষ জানান, শিক্ষকের প্রতি এমন সব অশোভন আচরণ, চাঁদাবাজি এবং মেয়েদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় ৩৪ বছরের পুরোনো এ কলেজের ৭৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তাঁরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিকার দাবি করেন।

রিয়াজুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমরা কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়জুল্লাহর বিরুদ্ধে  কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে তাঁর বহিষ্কার ও শাস্তি দাবি করেছি।

মানববন্ধনে অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলাম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক গোলাম জাকারিয়া, পবিত্র মোহন দাসি, মোল্লা সাব্বির হোসেন, কামিদুল ইসলাম, শংকর দাস, আফসারুজ্জামান, আবদুল আজিজ, মিজানুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, ফেরদৌসি পপি, মঈনুদ্দিন আহমেদ, আকবর আলী, মোশাররফ হোসেন, মো. হাবিবুল্লাহসহ কলেজের কর্মচারি আবদুল আলিম, শচীন্দ্র নাথ, অভিজিত বসু, শাহানুর ইসলাম, মনিরুজ্জামান, মাসুদ করিম প্রমুখ।

এদিকে কলেজ কর্মচারী সমিতির সভাপতি আবদুল আলিম বলেন, “মানববন্ধনের পর ফয়জুল্লাহ আমাকেসহ অনেকের কাছে ফোন করে হুমকি দিয়েছেন। ফয়জুল্লাহ বলেছেন, ‘তুই সব জানিস।’ তিনি আমাদের দেখে নেবেন বলেও শাসিয়েছেন।”

জানতে চাইলে দেবহাটা কেবি আহসানুল্লাহ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মো. ফয়জুল্লাহ বলেন, এই কলেজের ৫০০ পরীক্ষার্থীর দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রী তাঁর কাছে অভিযোগ করেন যে, শিক্ষকরা তাঁদের কাছ থেকে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার জন্য বাড়তি অনেক টাকা নিচ্ছেন। আমি বিষয়টি উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সুমনকে জানিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলানোর জন্য গত সোমবার অধ্যক্ষের কক্ষে যাই। কিন্তু অধ্যক্ষ স্যার আমার কোনো কথা না শুনেই বলেন, ‘তুমি বেরিয়ে যাও।’ আরো বলেন, ‘আমি তোমার কাছে হিসাব দিতে রাজি নই। তোমার সভাপতির সঙ্গেও কথা বলতে রাজি নই।’

ফয়জুল্লাহ আরো বলেন, কিছু সময় পর প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত ফি নেওয়ার প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধনের ঘোষণা দেই। আগামীকাল বুধবার এ মাননববন্ধন হওয়ার কথা। তাঁর আগেই শিক্ষকরা আমাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করতে মাঠ দখল করে নিলেন।

ফয়জুলাহ আরো বলেন, ‘আমি অধ্যক্ষ স্যারসহ কোনো স্যারের সঙ্গে গত চার বছরে এতটুকু অশোভন আচরণ করিনি।’

জানতে চাইলে কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান দেবহাটা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সুমন বলেন, ‘সব ঘটনা শুনেছি। তবে কলেজ সভাপতি ফয়জুল্লাহ অধ্যক্ষের কাছে গিয়েছিলেন প্র্যাকটিক্যালে বেশি টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলানোর জন্য। কিন্তু তিনি রাজি হননি।’

সাইফুর রহমান আরো বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত ফয়জুল্লাহর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করে রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’