অ্যাপে ট্রেনের টিকেট না পেয়ে কমলাপুরে গিয়ে ক্ষোভ

Looks like you've blocked notifications!
ট্রেনের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করতে আজ বৃহস্পতিবার কমলাপুর রেল স্টেশনে ভিড়। ছবি : ফোকাস বাংলা

ইব্রাহিম মোল্লা (২৫) ঈদ উপলক্ষে ১ জুন পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনে চেপে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় যেতে চান। তাই আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে অ্যাপের মাধ্যমে টিকেট কাটার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কোনোভাবেই টিকেট কাটতে পারেননি তিনি। কোনো উপায় না পেয়ে দুপুর ২টার দিকে কমলাপুর রেল স্টেশনে চলে আসেন।

রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে আড়ায় ঘণ্টার জ্যাম ঠেলে দুপুরে কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছান ইব্রাহিম মোল্লা। দাঁড়িয়েছেন লম্বা লাইনে। কখন টিকেট পাবেন, তা তিনি জানেন না। টিকেট পাবেন কি না, সেটিও তিনি জানেন না। কথা প্রসঙ্গে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অ্যাপে টিকেট পাওয়া যাবে না আগে থেকে বলে দিলেই হতো। আমরা সোজা কাউন্টারে চলে আসতাম। অযথা আমার এত সময় কেড়ে নেওয়া হলো। এখন টিকেট কখন পাব সেটাও তো জানি না। কী একখান অ্যাপ বানাইছে, ঢুকতেই পারি না!’

গোলাম রাব্বানী (৩২) খুলনা যাবেন চিত্রা এক্সপ্রেসে চেপে। গতকাল বহু চেষ্টা করেও অ্যাপের মাধ্যমে টিকেট কাটতে পারেননি। তাই আজ ভোরেই কমলাপুর চলে আসেন টিকেট পাওয়ার আশায়। গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘গতকাল বহু সময় ধরে চেষ্টা করেও অ্যাপে প্রবেশ করতে পারিনি। আজ সেহরি খেয়েই চলে এসেছি। মাত্র (বেলা সাড়ে ১১টা) টিকেট পেলাম। খুব ভালো লাগছে এখন। যদিও রেল কর্তৃপক্ষ এই অ্যাপ চালু করে আমাদের ভোগান্তি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।’

শুধু ইব্রাহিম বা গোলাম রাব্বানী নন, অ্যাপের মাধ্যমে টিকেট কাটতে গিয়ে আরো অনেকে পড়েছেন বিপাকে। ঢাকা থেকে যশোর যাওয়ার জন্য আটজন বন্ধু ট্রেনের টিকেট কাটার জন্য চেষ্টা করেছিলেন গতকাল। এদের ভেতরে ইয়াসিন আলী নামের একজন সৌভাগ্যক্রমে টিকেট পেয়ে যান। কিন্তু তাঁর বাকি বন্ধুরা টিকেট না পাওয়ায় ইয়াসিন আলী ট্রেনে যাবেন না। জানতে চাইলে ইয়াসিন আলী বলেন, ‘আমি অনলাইনে টিকেট পেলেও যাচ্ছি না। কারণ আমরা সবাই এক সঙ্গে যেতে চাই। সেটা যেহেতু হচ্ছে না, আমি একা গিয়ে কী করব? অ্যাপে টিকেট না পেয়ে আমরা বাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

আজ চট্টগ্রাম যাবেন খন্দকার আমিন। তিনি করেন অন্যরকম অভিযোগ। আমিন বলেন, ‘আমি এখন যাব চট্টগ্রাম। কিন্তু টিকেটের জন্য আমাকে দাঁড়াতে হচ্ছে অগ্রিম টিকেটের লাইনে। তাহলে কি আমিও ১০ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টিকেট কিনব?’

জানতে চাইলে স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, ‘এক সঙ্গে দেড় লাখ মানুষ ঈদের টিকেট কাটতে অ্যাপে ঢুঁ মারছেন, এতে অ্যাপ ডাউন হয়ে যাচ্ছে। ফলে অধিকাংশই টিকেট কাটতে পারছে না। ৯০ ভাগের বেশি মানুষ টিকেট থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অ্যাপের টিকেটগুলো কাউন্টারে ট্যান্সফার  করব আমরা। মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে বুঝতে পারছি। আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি সবার কাছে।’

রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রেলের যাত্রীসেবা বাড়ানোর জন্য এ বছর থেকে ৫০ শতাংশ টিকেট রেলওয়ের অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অ্যাপের গতি ডাউন হয়ে যাওয়াতে ঠিক মতো সুবিধা নিতে পারছে না টিকেট প্রত্যাশী যাত্রীরা। ঢাকা থেকে সব আন্তনগর ট্রেন মিলিয়ে দিনে প্রায় ৩০ হাজার ট্রেনের টিকেট রয়েছে। এর মধ্যে ৫ ভাগ রেলওয়ে কমকর্তা-কর্মচারী ও ৫ ভাগ ভিআইপি ছাড়া বাকি সব টিকিটের ৫০ শতাংশ অনলাইন, এসএমএস ও অ্যাপে পাওয়ার কথা।

গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে রেলের অগ্রিম টিকেট দেওয়া শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারও সকাল ৯টা থেকে কমলাপুরে ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়। আজ দেওয়া হয় ১ জুনের টিকেট। আগামীকাল ২৪ মে দেওয়া হবে ২ জুনের টিকেট। ২৫ মে দেওয়া হবে ৩ জুন এবং ২৬ মে দেওয়া হবে ৪ জুনের টিকেট।