চাল আমদানির হিড়িক কেন, জানতে চান ফখরুল

Looks like you've blocked notifications!
আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : এনটিভি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ধানের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকের ধান সরকার কিনে নিয়েছিল। তখন গুদামজাত করার মতো বেশি স্থান না থাকায় স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাতে ধান গুদামজাত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন, বিশ্বব্যাংক থেকে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য টাকা এনে সরকার দলীয় লোকজন ভাগ করে খেয়ে ফেলছেন।’

আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতা এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ঋণ খেলাপিদের মাফ করা হয় কিন্তু কৃষকের ঋণ মওকুফ হয় না। আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম বহু কৃষি ঋণ সুদসহ মওকুফ করে দিয়েছিলাম। সরকার বলেছিল কৃষকের হাতে কার্ড পৌঁছে দেওয়া হবে। সেই কার্ডের মাধ্যমে কৃষকের নামে বরাদ্দকৃত টাকা সরাসরি কৃষকের হাতে চলে যাবে। কিন্তু তার কিছুই করেনি সরকার।’

কৃষক ও ভোক্তার মাঝে মধ্যবর্তী একটা পক্ষ সুবিধা ভোগ করায় কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকার কৃষকদের ন্যায্য দাবির কথা কানেও নিচ্ছে না। বরং সরকারের একজন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কৃষকদের এই বিক্ষোভকে ‘স্যাবোটেজ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।’’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কৃষকদের বাস্তব এই সেন্টিমেন্টকে সরকার দলীয় শীর্ষ নেতার এহেন মন্তব্যে নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। এ দেশের কৃষকদের বর্তমানে যে দুরবস্থা তা সরকারের ভুল নীতির প্রতিফলন। কিন্তু সরকার দলের নেতারা কৃষকের আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা খুঁজে পাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, সরকার এখন ভূতের মতো সব জায়গায় বিএনপিকে দেখতে পায়। বিএনপি ইজ সো পাওয়ারফুল, বিএনপি সব পারে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগানদাতা কৃষক পরিবারের অবস্থা আজ খুবই নাজুক ও দুর্বিষহ। কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত। দেশের প্রায় দেড় কোটি কৃষক পরিবারের আজ নাজুক অবস্থা। খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে কৃষকের বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে। দেশের কৃষককূল তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে বহু স্থানে ধানের জমিতে আগুন দিয়ে রাস্তায় ধান ফেলে দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। কৃষকদের বিশেষ করে ধান চাষিদের চাওয়া হচ্ছে- সরকার ন্যায্যমূল্যে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করুক। কৃষকদের চাওয়া খুবই সামান্য ও যৌক্তিক। আমরা কৃষকদের এই যৌক্তিক দাবির সাথে একমত।’

ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচাল (ইউএসডিএ) এর একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওই প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৩২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণে (৩৮ লাখ মেট্রিক টন) বাংলাদেশ চাল আমদানি করেছে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে। একদিকে সরকার বলছে, চাল উৎপাদনে তারা স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জন করেছে; অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করছে। চাল উৎপাদন নিয়ে সরকারের মিথ্যাচার ধরা পড়েছে সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানেই। বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে চাল আমদানি করার কারণে সরকারি বেসরকারি হিসাব বলছে, দেশে বর্তমানে ২৫/৩০ লঅখ টন চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে। ফলে বাজারে চাপ তৈরি করছে এবং ধানের দাম কমছে। অনিয়ন্ত্রিত চাল আমদানিকে দেশের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন, কেন এই চাল আমদানির হিড়িক?’

‘চাল আমদানির ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা এতই ব্যাপকতা লাভ করেছে যে, সরকারের অংশীদার একটি দলের প্রধান সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননও চাল আমদানিতে সরকারের দুর্নীতির কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া সরকারি দলের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনও এহেন পরিস্থিতির জন্য এ সরকারের সাবেক খাদ্য মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে দায়ী করেছেন।’

বিএনপিনেতা আরো বলেন, ‘সরকার ব্যাংক লুটপাটকারীদের দুধকলা দিয়ে পুষছেন। অথচ এই খেলাপীঋণের মাত্র ১০ শতাংশ বরাদ্দ দিলে সরকার আরো প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারে। এতে দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা উপকৃত হবে।’

বর্তমানে কৃষকদের যে দূরবস্থা তা দূর করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকের ঘাটতি লাঘব ও কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীন কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। দেশের হাওর ও দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় ৫০-৭০% হারে ভর্তুকি দিয়ে প্রকৃত কৃষকদেরকে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য ছিল এ প্রকল্পটির। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সরকারের দলীয়করণ ও দুর্নীতির কারণে এই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কোটি কোটি টাকার এই প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে সরকারের দলীয় লোকজন কিন্তু প্রকৃত কৃষক এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’