পুনরায় পুঁতে দিতে দরকষাকষি, ১৫ বস্তা ওষুধ উদ্ধার!

Looks like you've blocked notifications!
সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে পুঁতে রাখা অন্তত ১৫ বস্তা সরকারি ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী শনিবার উদ্ধার করা হয়। ছবি : এনটিভি

সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ভেতরে অন্তত ১৫ বস্তা সরকারি ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী পুঁতে রাখা ছিল। তবে ভোর রাতের প্রচণ্ড বৃষ্টিতে মাটি সরে গিয়ে বস্তাগুলো বের হয়ে আসে। তখন ওষুধগুলো নজরে আসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। নজরে আসে সাধারণ রোগীদের।

আজ শনিবার ভোর রাতের বৃষ্টির পর এই ঘটনা ঘটে হাসপাতাল ক্যান্টিনের পেছনে সেপটিক ট্যাংকের পেছনে। ঘটনা নজরে আসার পর স্টোরকিপার দুপুরে শ্রমিকদের ডাকেন। ওষুধগুলো পুনরায় মাটিতে পুঁতে দিতে শ্রমিকদের পাঁচ হাজার টাকা দিতে চান। কিন্তু শ্রমিকরা ১০ হাজার টাকা দাবি করেন।

বেরিয়ে যাওয়া ওষুধগুলো পুনরায় মাটিতে পুঁতে দেওয়ার জন্য শ্রমিক আর স্টোরকিপারের মধ্যে অনেক সময় দরকষাকষি চলে। এরপর  সেখানে থাকা অনেকেই জেনে যান পুরো ঘটনা। মেডিকেল কলেজটির এক শিক্ষার্থী সাতক্ষীরা সদর থানায় খবরটি জানান। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে। সে সময় কিছু ওষুধের নমুনা জব্দ করে পুলিশ। এরপর শ্রমিকদের সব ওষুধ তুলতে বলেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান।

শ্রমিকরা ওষুধ তুলতে থাকেন। এর ভেতরে একজন শ্রমিক বলে ওঠেন, ‘সব ইনটেক মাল এগুলো। গরিব মানুষ পাচ্ছে না। হাসপাতালে মানুষ হাহাকার করেও এসব পাচ্ছে না। মেডিকেলের লোকজন এসব ফার্মেসিতে দিয়ে দিচ্ছে। এ জাগায় অন্তত কয়েক গাড়ি মাল আছে। কোটি কোটি টাকা দাম এগুলো।’

ওসি মোস্তাফিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজর এক শিক্ষার্থী আমাকে ফোন করে জানান যে, সেপটিক ট্যাংকের পেছনের ড্রেনে অনেক বস্তা ওষুধ পড়ে আছে। তখন এডিশনাল এসপিসহ আমি ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে কলেজের প্রিন্সিপাল ও তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁদেরকে অনুরোধ করি ঘটনাস্থলে আসার জন্য। কিন্তু তাঁরা আসেননি। এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাউকে পাঠাননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই আমাদেরকে সহযোগিতা করেনি। বিষয়টা খুবই রহস্যজনক।’

ওসি আরো বলেন, ‘ওই ওষুধের বস্তা থেকে কিছু মেডিসিন আমরা জব্দ করেছি। সব মেডিসিনেরই মেয়াদ আছে। কোনো কোনো ওষুধের ২০২২ সাল পর্যন্ত মেয়াদ আছে। কিন্তু বুঝলাম না সেখানে ওষুধগুলো কীভাবে গেল। এসব ব্যাপারে জানার জন্য হাসপাতালের কাউকেই আমরা পাইনি। সুতরাং বিষয়টি আমরাও জানতে পারিনি।  কে বা কারা এই ওষুধগুলো লোপাটের সাথে জড়িত তা তদন্ত না করে বলা সম্ভব নয়।’

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ড. শেখ শাহজাহান আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি ২০১৭ সালের শেষের দিকে হাসপাতালে জয়েন করার পর যেসব ওষুধ কিনেছি, এসব ওষুধ সেগুলো না। বহু টাকা মূল্যের এসব ওষুধের সঙ্গে গজ, ব্যান্ডেজ ও ক্যানোলা রয়েছে।’

তাহলে কি অন্য হাসপাতাল থেকে ওষুধগুলো আপনার হাসপাতালে এসেছে-এমন প্রশ্নে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘তা তো আসার কথা না।’

ওষুধ জব্দ করতে পুলিশ এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সহযোগিতা করেনি কেন- এমন প্রশ্নে শেখ শাহজাহান আলী বলেন, ‘আমাদের তো ইমারজেন্সি নেই। তখন হাসপাতালে কেউ ছিল না। আমিও ছিলাম না।’

ওষুধগুলো মাটি থেকে ওপরে উঠার পর হাসপাতালের স্টোর কিপার শ্রমিক ডেকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আবার মাটিতে পুঁতে দিতে বলেছিল। তাহলে কি তিনি জড়িত? কিন্তু তিনি একা এতগুলো ওষুধ কীভাবে সরাবে স্টোর থেকে- এমন প্রশ্নে শেখ শাহজাহান আলী বলেন, ‘তিনি জড়িত থাকতে পারেন। ঘটনা ঘটার পর তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেছেন। আর কেউ জড়িত আছে কি না আমি জানি না। আগামীকাল আমরা মিটিংয়ে বসব। তদন্ত কমিটি গঠন করব। তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।’

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান, তাঁরা তাঁদের প্রয়োজনীয় ওষুধ না পেয়ে বাজার থেকে কিনতে বাধ্য হন। অথচ সরকারের দেওয়া কোটি কোটি টাকার ওষুধ যা বিনামূল্যে দেওয়ার কথা তা চুরি করছে অসাধু ব্যক্তিরা। তারা ওষুধ লোপাটের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।