‘ট্রেনে উঠতেই ১৮ ঘণ্টা’

Looks like you've blocked notifications!
আবুল হাসান বসে আছেন। পাশে ঘুমিয়ে আছেন তাঁর স্ত্রী। ছবি : এনটিভি

রাসেল হোসেন ২২ মে সেহরি খেয়ে রংপুর এক্সপ্রেসের ঈদের অগ্রিম টিকেট কিনতে গিয়েছিলেন কমলাপুর রেলস্টেশনে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট হাতে পেয়েছিলেন বিকেল ৪টার সময়। আজ ৩১ মে সকাল ৯টায় সেই ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল। আজ রাসেলের বোন-ভাগনেরা গাজীপুর থেকে কমলাপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন সেহরি খেয়েই। উদ্দেশ্য রংপুর। সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ট্রেন ছেড়ে যায়নি।

আজ শুক্রবার কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, রাসেল তাঁর এক ভাগনে, দুই ভাগনি ও বোনকে নিয়ে কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় আছেন। স্টেশনে বিছানো পাটিতে তাঁর ভাগনে ও বোন ঘুমিয়ে আছেন। একই বিছানায় দুই ভাগনি বসে আছেন। বসার স্থান না থাকায় দাঁড়িয়ে আছেন রাসেল।

শুধু রাসেল নন, আবুল হাসানও যাবেন রংপুরের গাইবান্ধায়। তিনি তাঁর মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসে আছেন কমলাপুর। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে তাঁরা আছেন সেখানে। অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে স্ত্রী বসার স্থানে ঘুমিয়ে আছেন। আবুল হোসেনও টানা ৯ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর টিকেট হাতে পেয়েছিলেন।

রাসেল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার বোন, ভাগনে-ভাগনি এসেছে গাজীপুর থেকে। সেহরি খেয়েই সে রওনা দিয়েছে। সেই সকাল ৯টা থেকে এভাবে বসে আছি। অথচ এখন দুপুর প্রায় ২টা বাজে। ৩টার আগে ট্রেন ছাড়বে না বলে শুনেছি। টিকেট কাটতে ১২ ঘণ্টা, ট্রেনে ছাড়তে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। মানে ট্রেনে উঠতেই ১৮ ঘণ্টা! এভাবে হয়? রেল কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে ফাজলামি করছে। টিকেট কাটতে এসে ১০ ঘণ্টা দেরি করতে হবে। ট্রেনে উঠতেও পাঁচ-ছয় ঘণ্টা দেরি করতে হবে। এভাবে কি একটা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে?’

আবুল হাসান বলেন, ‘সেই সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বসে আছি। আমার স্ত্রী তো রীতিমতো অসুস্থ হয়ে গেছে স্টেশনেই। মেয়েটাও ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছে। না জানি আরো কত কিছু দেখতে হয়। আর কখনো ট্রেনে যাব না ঈদের সময়। শত শত মানুষ একটা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে। অথচ ট্রেনের কোনো খোঁজ নেই।’

এ ছাড়া রংপুর এক্সপ্রেসের অপেক্ষায় আছেন এমন অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে কথা বলেছে এনটিভি অনলাইন। তারা সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, যাত্রীদের কথা কেউ মাথায় রাখে না। এসব কঠোরভাবে তদারকি করার লোকও বোধ হয় নেই। রাষ্ট্রের উচিত, অন্তত ঈদের সময় এগুলো কঠোরভাবে তদারক করা।

আজ শুক্রবার সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। মন্ত্রী বলেন, ‘সকাল ১০টা পর্যন্ত ১৮টি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে কিছু সমস্যার কারণে চারটি ট্রেন সঠিক সময়ে ছেড়ে যেতে পারেনি। এ জন্য আমি দুঃখিত। কাল থেকে এ সমস্যা হবে না।’

জানতে চাইলে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক আমিনুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “গতকাল রংপুর যাওয়ার পথে ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ নামের ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু সেতুতে ওঠার আগে একটি বগি বিকল হয়ে যায়। পরে ট্রেনটি মেরামত করতে দেরি হয়েছে। সে কারণেই ট্রেনটি ফিরতে দেরি হয়েছে।”