‘আহ, কী মজা! ৩০ টাকায় হেলিকপ্টার চালিয়েছি!’
সারি সারি উড়োজাহাজ। যেন যাত্রীর অপেক্ষায়; উঠে বসলেই পাখা মেলবে আকাশে। বিমানবন্দর বা রানওয়ে ভেবেও ভুল হয়ে যেতে পারে কারো কারো! এটি আসলে বিমানবাহিনীর জাদুঘর।
এখানে শিশুরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত উড়োজাহাজে উঠছে। কেউবা হেলিকপ্টারে উঠছে। টিকেট মাত্র ৩০ টাকা!
ঈদের দিন সকাল থেকেই বৃষ্টির হানা শুরু হয়। কিন্তু তাতে শিশুদের কী? ঈদে আনন্দ না করে শিশুরা থাকতে পারে?
যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আসা শিশু আনিসা তাহসীন জাহীন ও ওয়াজিয়া আনঞ্জুম কায়নাত বায়না ধরেছে হেলিকপ্টারে উঠার। শিশুদের চাহিদা মেটাতে সঙ্গে আসা বাবা-মা হেলিকপ্টারে টিকেট কিনে উঠছেন। হেলিকপ্টার ও উড়োজাহাজে উঠে আনন্দে আত্মহারা দুই শিশু। তাও বসেছে একেবারে পাইলটের আসনে!
এ বিষয়ে শিশু আনিসা তাহসীন জাহিন বলে, ‘আমি ৩০ টাকায় হেলিকপ্টারে উঠেছি,আমি পাইলট হয়েছি! ড্রাইভিং করেছি। খুব মজা লাগছে।’
অপর শিশু ওয়াজিয়া আনঞ্জুম কায়নাত বলে, ‘আমিও বিমানে উঠেছে, ট্রেনে উঠেছি, খুবই ভালো লাগছে। ঈদে খুব মজা করছি।’ এসব শিশুদের মতো নাফিজ, আফিফ, রুবেল, রানাসহ অনেক শিশুই আনন্দ করছে এ জাদুঘরের বিভিন্ন রাইডে। কেউ বা বড় পুকুরে সাজানো নৌকা নিয়ে মেতে উঠেছে কেউ বা হাতির পিঠে!
যাত্রাবাড়ী থেকে আসা দুই শিশুদের সাথে আসা অভিভাবক আমাতুল আলীম নুপূর বলেন,’ঈদের নামাজের পর বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। এ বছর গ্রামে যাইনি। তাই বাচ্চারা বাইরে যাওয়ার বায়না ধরেছে। এখানে মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে হেলিকপ্টার বিমানে উঠা যায়—এসব দেখে বাচ্চারা অনেক মজা পাচ্ছে। তবে বৃষ্টির কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল।’
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিমান জাদুঘর। জাদুঘরটিতে রয়েছে জাতীয় অহংকার ও স্মৃতি বিজড়িত উড়োজাহাজসমূহ। ১৯৭১-এর উত্তাল দিনগুলোতে স্বল্প সম্পদ আর জনবল নিয়ে ডিমাপুরে সম্পূর্ণ বৈরী পরিবেশে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এই গৌরবময় ঐতিহ্যের ইতিহাস, সাফল্য ও উন্নয়নের ক্রমবিকাশকে সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেগম রোকেয়া সরণি সংলগ্ন তেজগাঁও বিমানবন্দর রানওয়ের পশ্চিম পাশে মনোরম পরিবেশে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর।
জাদুঘরে দর্শনার্থীদের পানাহারের জন্য প্রাঙ্গণের দক্ষিণ দিকে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ফুড কোর্ট। এ ছাড়া বিমান বাহিনীর বিভিন্ন দ্রব্যাদি দিয়ে সজ্জিত হয়েছে স্যুভেনির শপ ‘নীলাদ্রি’। শিশুদের মনোরঞ্জন ও উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য শিশু পার্কের পাশাপাশি ফুটপাথের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে জিরাফ, শিম্পাঞ্জি, হরিণ ইত্যাদি নানা রকম পশু-পাখির প্রতিকৃতি। এটার নাম দেওয়া হয়েছে ‘চিলড্রেন হেভেন’। রয়েছে পানির ফোয়ারাও।
এই বিমানগুলো ছাড়াও রয়েছে আরো নানা রকম বিমান। জাদুঘরটি সোম থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্র ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ এবং প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। সময় ও সুযোগ বুঝে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশ বিমান জাদুঘর থেকে।
জাদুঘরে স্থান পাওয়া উড়োজাহাজগুলো
হান্টার বিমান : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় এই বিমানটির অংশগ্রহণ ও অবদানের জন্য ভারতীয় বিমান বাহিনী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে উড়োজাহাজটি উপহার হিসেবে দেয়।
এন-২৪ বিমান : রাশিয়ার তৈরি এই উড়োজাহাজটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে ১৯৭৩ সালে বলাকা নামে সংযোজিত হয়। বিমানটি সরকারিভাবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ব্যবহার করতেন।
এফ-৮৬ যুদ্ধবিমান : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই উড়োজাহাজ ব্যবহার করে। যুদ্ধে পাকবাহিনী বিমানটিকে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়।
প্রথম বিমান বলাকা : বাংলাদেশের প্রথম যাত্রীবাহী বিমান বলাকা। রাশিয়ার তৈরি এই উড়োজাহাজটি বাংলাদেশে আসে প্রথম ১৯৫৮ সালে। বর্তমানে এটা জাদুঘরে রাখা হয়েছে।