পানি নিয়ে সাতক্ষীরায় প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা
সাতক্ষীরার মাটি উর্বর। কৃষি, মৎস্যসহ সব উৎপাদনে এ এলাকা সমৃদ্ধশালী। অথচ জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা এই সম্পদের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। নোনা পানিতে কীভাবে ফসল উৎপাদন করা যায় এবং মিষ্টি পানির অপচয় না করে তা কীভাবে সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থায় আনা যায় তা নিয়েও সমন্বিত পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।
আজ সোমবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এসব বিষয় তুলে ধরেন। পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) সহযোগিতায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এ কর্মশালার আয়োজন করে। জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল আহসানের সভাপতিত্বে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, ‘পানি সম্পদের সমন্বিত উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পানির সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব। ভূগর্ভস্থ পানি সীমার নিম্নমুখী গমন, লবণাক্ততার প্রভাব, জলাবদ্ধতা, জলোচ্ছাস, অতি জোয়ারের পানিতে লবণাক্ততার প্রবেশ, অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষসহ বিভিন্ন বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, ‘খাস জমিসমূহ বেহাত হওয়ায় তার যথেচ্ছ ব্যবহার চলছে।’
মীর মোস্তাক আহমেদ আরো বলেন, ‘বেসরকারি সংস্থাসমূহ খেয়াল-খুশি মতো খাল নদী খনন করছে। এতে লাভ না ক্ষতি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল আহসান বলেন, ‘পানি সম্পদকে জনজীবনে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হলে সুপেয় পানি, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, লবণাক্ততা দূরীকরণ, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূউপরিস্থ পানির ব্যবহারসহ নানা বিষয়ে পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতার অভিশাপ দূর করতে না পারলে সাতক্ষীরার জনজীবন ও কৃষি ব্যাহত হবে। রাস্তা নির্মাণসহ কোনো কারণে মাটির প্রয়োজন হলে তা যেকোনো ব্যক্তির ভরাট হওয়া জলাধার থেকে নিতে হবে। এতে ভালো মাটি রক্ষা এবং পতিত থাকা মাটির যথাযথ ব্যবহার সম্ভব হবে।’
জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান আরো বলেন, ‘গত অর্থবছরে সাতক্ষীরায় ২৭ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা দুরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে।’ বেসরকারি সংস্থাগুলো জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো খাল খনন করতে পারবে না বলেও ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আবদুল সাদী বলেন, ‘খাসজমি উদ্ধারের পাশাপাশি জমির বন্দোবস্ত বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া সব খাল, নালা ও পুকুর খননের আওতায় আনতে হবে।’ শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সায়েদ মঞ্জুর আলম বলেন, ‘বন্দোবস্ত বাতিল কিংবা খাস জমি উদ্ধারের কোনো উদ্যোগ নিলেই আদালতে মামলা দিয়ে কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে তোলে এক শ্রেণির মানুষ।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী কে এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সরকার পানি আইন ও পানি বিধি প্রণয়ন করেছে।’ তিনি এসব বিধি কার্যকরভাবে প্রয়োগের আহ্বান জানান।
পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো) পরিচালক এস এম ফিরোজ আলম বলেন, ‘কেবল সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে আমরা পানিতে বাস করেও পানির অভাবে মারা যাই। আবার পানিই আমাদের মরণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই জটিলতাকে মোকাবিলা করতে হবে। ভূগর্ভস্থ, ভূ-উপরিস্থ এবং বৃষ্টির পানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।’
কর্মশালায় জেলা পরিষদ প্রশাসক মুনসুর আহমেদ বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তৈরি বাঁধ এখন এ অঞ্চলের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাউবোর প্রতিটি অবকাঠামো সংস্কার করা দরকার।’
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি নীতি প্রণয়ন করা হয়। আইনি কাঠামোতে আনতে ১৬ বছর অপেক্ষা করে পানি আইন প্রণীত হয়েছে।’ আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই আইন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন একটি জাতীয় কমিটি এবং পানি সম্পদমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কর্মশালায় জেলার সাত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।