রোহিঙ্গারা থাকলে সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়তে পারে, কূটনীতিকদের বাংলাদেশ

Looks like you've blocked notifications!
রোহিঙ্গা ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে আজ বুধবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের ব্রিফ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছবি : এনটিভি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সেনাবাহিনীর হত্যা-নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা যদি ফিরে যেতে না পারে, তাহলে তাদের মধ্যে সন্ত্রাসের তৎপরতা বেড়ে বিনিয়োগ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কার কথা কূটনীতিকদের অবহিত করেছে বাংলাদেশ।

সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়টি উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘ইদানীং (রোহিঙ্গাদের মধ্যে) কিছুটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু হচ্ছে। এটা আমরা অনেক দিন ধরেই আঁচ করেছিলাম যে এই বিরাট সংখ্যক লোক যদি পড়ে থাকে, তাহলে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়ার আশঙ্কা আছে। এ জন্য মিয়ানমারকে আবার জোর দিয়ে বলব, তোমরা তোমাদের কথা রাখো। লোকগুলোকে নিয়ে যাও।’

‘আর তাদের (মিয়ানমারের) বন্ধুপ্রতিম দেশ যারা, তাদেরও আমরা সম্প্রতি বলেছি এবং বলব। তাদের আমরা জোর করে বলব, তোমরাই আমাদের উপদেশ দিয়েছ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে ফেরত দেওয়ার। আগে আমরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে ফেরত দিয়েছি। তোমাদের বন্ধুকে বলো, ওদেরকে নিয়ে যেতে।’

‘কারণ, যদি না নিয়ে যায় (রোহিঙ্গাদের মধ্যে) সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়তে পারে, তখন তোমরা যে ওখানে বিনিয়োগ করেছ বা করবে বলে আশা করেছ, সবকিছু ভেস্তে যাবে। যদি অনিশ্চয়তা থাকে, তাহলে সেখানে উন্নয়ন সহজে হয় না,’ যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রোহিঙ্গা ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে আজ বুধবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের ব্রিফ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন এ কে আবদুল মোমেন।

বাংলাদেশ ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

‘মিয়ানমারের ডাহা মিথ্যা আর কত হজম করব’

আজ বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা ফিরে যাক, এটাই আমরা চেয়েছি। বরং মিয়ানমার বারবার কথা দিয়েও তাদের কথা রাখছে না। আমরা তাদের সঙ্গে অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছি। গত বছরের জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন শুরু হওয়ার কথা ছিল। দুই বছরের মধ্যে এটা শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা হয়নি। তার পরে বলা হলো, ২০১৮ সালের নভেম্বরে তারা শুরু করবে। সেটাও হয়নি। কিছুদিন আগে মিয়ানমারে চতুর্থ যৌথ সম্মেলনে গেলাম, তখন আমরা খুব আশাবাদী ছিলাম। বোধ হয় প্রক্রিয়াটা শুরু হলো। তা হয়নি।’

‘তারপর তারা আবার মিয়ানমারের আটশ গ্রামের মধ্যে দুইটা গ্রামে স্টাডি করেছেন। আটশর মধ্যে দুইটা! সেটা আসিয়ানকে দিয়ে, আসিয়ানের নামে এই স্টাডিটা করা হয়েছে! এবং সেখানে বলা হয়েছে, অবস্থা খুব ভালো। আটশ গ্রামের মধ্যে দুইটা গ্রাম, যেটা শোকেস গ্রাম। বলেছে, সেটা খুব ভালো করেছে! বাস্তবিক অর্থে মিয়ানমার তাদের কথা রাখেনি। মিয়ানমারের সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে তারা কোনো ভূমিকা রাখেননি। ছয় মাস আগে তারা যখন বলল, আমরা সব ঠিকঠাক করে দেব। ছয় মাস পরে এই মে মাসে আমরা যখন মিটিং করলাম, নতুন করে কোনো উন্নয়ন হয়নি। এখন পর্যন্ত একটি রোহিঙ্গা ফেরত যায়নি। আমাদের দেশে যে রোহিঙ্গা আছে, একটিও যায়নি। তারা যে বারবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, একটিও যায়নি। এমনকি যারা নো-ম্যানস ল্যান্ডে আছে, আমাদের দেশে না, ওখানে আছে, একটিও ফেরত যায়নি। সুতরাং মিয়ানমার সারা বিশ্বে যা বলছেন, সেটা আসলে সত্য না।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না। তারা আমাদের বন্ধু। তাদের নিয়েই আলোচনার মধ্যে, নিয়মের মধ্যে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া দরকার। কিন্তু এ রকম ডাহা মিথ্যা আমরা কেমন করে কত হজম করতে পারি।’

‘কূটনীতিকরা একবাক্যে বলেছেন, আপনাদের সঙ্গে আছি’

আজকের বৈঠকের ব্যাপারে এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা আমাদের অবস্থান তাদের (কূটনীতিকদের) জানিয়েছি। এবং তাঁরা একবাক্যে বলেছেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। মিয়ানমার যে রিপোর্টগুলো বলছে, বিভিন্ন লোক দিয়ে তৈরি করছে, সব ডাহা মিথ্যা। এগুলো পৃথিবীর কেউ বিশ্বাস করে না। আমরা তাদের বলেছি, আপনারা মিয়ানমারে যান, রাখাইনের যান। সহায়ক পরিবেশ যাতে তারা তৈরি করে, তার জন্য চাপ আরো আরো বৃদ্ধি করেন। মোটামুটিভাবে তাঁরা সবাই রাজি হয়েছেন।’

সম্প্রতি সৌদি আরবের মক্কায় অনুষ্ঠিত ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ১৪তম সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মামলাটি অবিলম্বে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) চালু করতে গাম্বিয়ার নেতৃত্বে মন্ত্রী পর্যায়ের অ্যাডহক কমিটিকে আহ্বান জানানো হয়।

সম্মেলনের চূড়ান্ত বিবৃতিতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত মন্ত্রী পর্যায়ের অ্যাডহক কমিটির পক্ষে ওআইসির সমর্থন নিশ্চিত করতে এবং আন্তর্জাতিক সব আইনি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে বলা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে মামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুব ভাগ্যবান যে ওআইসির বিভিন্ন দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের সেদিন ওআইসির সামিট হয়। তারা মিয়ানমারের বিষয়টা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে নিয়ে যাবেন। গাম্বিয়া এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল এ ব্যাপারে অত্যন্ত পরিপক্ব লোক। তিনি এই মামলাগুলো আগেও করেছেন। তিনি সেটা নিয়ে যাবেন।  ওআইসির সব দেশ এতে সমর্থন দিয়েছে।’