সীমান্তে হত্যা নয়, অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে : বিএসএফ প্রধান

Looks like you've blocked notifications!
শনিবার সীমান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাফিনুল ইসলাম (বাঁয়ে) ও বিএসএফ প্রধান রজনীকান্ত মিশ্র। ছবি : এনটিভি

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যা নয়, অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক (ডিজি) রজনীকান্ত মিশ্র। সাম্প্রতিক সময়ে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু’র সংখ্যা কিছু বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন কোনো বিকল্প থাকে না, প্রাণ বাঁচাতে তখন শুধু বিএসএফ প্রতিহত করে।

বিএসএফের ডিজি দাবি করেন, মানুষের জীবন তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সব কটি ঘটনাই ভারতীয় ভূমিতে ঘটেছে, আর তাতে বিএসএফ সদস্যরাও প্রাণ হারিয়েছেন।

আজ শনিবার রাজধানীর পিলখানা সদর দপ্তরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে তিন দিনব্যাপী বৈঠক শেষে রজনীকান্ত মিশ্র এসব কথা বলেন।

পিলখানার এ বৈঠক বিজিবি-বিএসএফের মধ্যকার ৪৮তম সম্মেলন। এতে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।

বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং ও প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ঘটছে বলে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএসএফপ্রধান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড’ শব্দের সঙ্গে তিনি একমত নন। সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হচ্ছে।

কয়েক মাস আগে সাতক্ষীরা সীমান্তের কাছে এক যুবকের পায়ুপথে পেট্রল ঢেলে বিএসএফ হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেন আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেই। পরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর কারণ কী?

সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো মন্তব্য করেননি বিএসএফের ডিজি। তিনি ‘হত্যাকাণ্ড’ শব্দ ব্যবহারে আপত্তি তোলেন। বিএসএফপ্রধান বলেন, মানুষের জীবন তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে সীমান্তে মারণাস্ত্র ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে তাদের। বিএসএফকে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

‘তবে পরিস্থিতি মাঝেমধ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। দুর্বৃত্তরা বিএসএফের ওপর পাথর ছুড়েছে, লাঠিপেটা করেছে, কখনো কখনো দা দিয়ে হামলা করেছে। কোনো বিকল্প না থাকায় প্রাণে বাঁচতে খুব অল্প কিছু ঘটনায় বিএসএফ মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছে,’ বলেন বিএসএফ ডিজি।

সংবাদ সম্মেলনে রজনীকান্ত মিশ্র জানান, গত বছর ভারতীয় ভূমিতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি, ছয়জন ভারতীয়। একজন জওয়ান মারা গেছেন, ৩৯ জন আহত হয়েছেন। এ বছরও তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা প্রতিটি ঘটনায় নিয়মমাফিক থানায় মামলা করেছেন এবং তদন্ত করেছেন।

বিএসএফপ্রধান জানান, ভারতীয় ভূমিতে দুর্বৃত্তদের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করেছেন। তারা বিজিবি ও বিএসএফকে সীমান্তের যেসব জায়গা দুর্বল, সেসব জায়গা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন। এতে অনুপ্রবেশের মতো ঘটনা ঘটবে না।

ফেলানী হত্যাকাণ্ড ও মেহেরপুরে আম পাড়তে গিয়ে এক বালকের বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার পর বিচার হয়েছে কি না, জানতে চাইলে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সর্বোচ্চ গুরুত্ব রয়েছে এ বিষয়গুলোর প্রতি। ফেলানী বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আমরা আদালতকে প্রভাবিত করতে পারি না।

বিজিবির মহাপরিচালক মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, বিএসএফের মহাপরিচালক সবই বলে ফেলেছেন। তারা তিন দিনব্যাপী বৈঠকে সীমান্তে ‘মৃত্যু’ নিয়ে কথা বলেছেন এবং এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। কিছু বিষয়ে তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। দুই পক্ষ মাদকদ্রব্য চোরাচালান, অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালান এবং জাল টাকা রোধ নিয়ে আলোচনা করেছে। দুটি বাহিনীর কেউ যেন অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম না করে, সে ব্যাপারেও কথাবার্তা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককে জোরদার করতে বিএসএফ দিল্লি থেকে একটি মোটরসাইকেল র‍্যালি নিয়ে চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর বিজিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকায় পৌঁছাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নতুন করে আবারও ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে আজকের বৈঠকে। ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশ এ ধরনের সব ঘাঁটি নির্মূল করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে এবং এতে তারা সন্তুষ্ট।

বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ভারতে জেএমবিকে আশ্রয়–প্রশ্রয়ের অভিযোগের ব্যাপারে বিএসএফ কী বলে-এমন প্রশ্নে সাফিনুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে এ নিয়ে সে অর্থে আলোচনা হয়নি। তবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দেওয়া হয় না।

ভারতে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে সে দেশের সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল। এর সত্যতা কতটুকু-এমন প্রশ্নে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাজ সীমান্ত পেরিয়ে কেউ এদিক-ওদিক গেল কি না দেখা। সঙ্গে আরো কিছু বিষয় নজরদারি করা হয়। এ বৈঠকে ‘জঙ্গি হামলা’ নিয়ে আলোচনার সুযোগ ছিল না।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, সীমান্ত এলাকায় মৃত্যুর বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি এবং এই বিষয়ে আরো সতর্ক হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। যেন এই সংখ্যাটা একেবারে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে পারি। সীমান্তের এপার-ওপারে যে চোরাচালান হয়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।