থিয়েটার সুনামগঞ্জের বর্ষপূর্তিতে ‘অপেক্ষার ৪৩ বছর’ নাটক মঞ্চস্থ
ছেলে যুদ্ধে গেছে, মা শুধু এটা জানেন। কিন্তু এরপর ছেলের আর কোনো খোঁজ নেই। এক সময় যুদ্ধ শেষ হয়, দেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু ছেলে বাড়ি ফেরেন না। মা ছেলের পথ চেয়ে থাকেন। এ সময় জানতে পারেন ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু কোথায়, কিভাবে শহীদ হয়েছেন ছেলে, তাঁর সমাধি কোথায় এটা আর জানা হয় না। দিন যায়, মাস যায়, যায় বছর। এভাবে কাটে ৪৩ বছর। এরপর একদিন ছেলের সমাধির সন্ধান মেলে।
বয়সের ভারে নুয়েপড়া মা দেশের এক প্রাপ্ত থেকে ছুটে আসেন আরেক প্রাপ্তে। স্বাধীনরা ৪৩ বছর পর ছেলের সমাধির পাশে দাঁড়ান, আঁচলে মুছে দেন ছেলের সমাধির নাম ফলক।
রাজবাড়ী জেলার মুক্তিযোদ্ধা আতাহার আলী ১৯৭১ সালে শহীদ হন সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী ডলুরা এলাকায়। সেখানেই ৪৮ জন বীর যোদ্ধার সমাধিস্থলে ২৭ নম্বর আতাহার আলীর কবর। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর তাঁর পরিবার এই সমাধির খোঁজ পায়।
আতাহার আলীর বীরত্বগাঁথা আর তাঁর মায়ের দীর্ঘ অপেক্ষার গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে নাটক ‘অপেক্ষার ৪৩ বছর’। সুনামগঞ্জের তরুণ নাট্যজন দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন। থিয়েটার সুনামগঞ্জ-এর তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শুক্রবার রাতে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসন রাজা মিলনায়তনে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। হলভর্তি দর্শক মুগ্ধ হন নাটকটি দেখে। শহরের একঝাঁক নতুন মুখ নাটকে অভিনয় করেছেন।
নাটকে আতাহার আলীর যৌবনের নানা ঘটনা, যুদ্ধে অংশগ্রহণ, ছেলের জন্য মা বেলেজান নেছার দীর্ঘ অপেক্ষার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে নিপুণভাবে। উঠে এসেছে সুনামগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের নানা প্রসঙ্গও। উঠে এসেছে বালাট সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের নানা কর্মকাণ্ড, ঝটিকা ও সম্মুখ আক্রমণ।
নাটক মঞ্চায়নের পর আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী, হাসন রাজা ট্রাস্টের সভাপতি দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী, সুনামগঞ্জ পৌর কলেজের অধ্যক্ষ মো. শেরগুল আহমেদ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অনিরুদ্ধ কুমার ধর, সিলেট সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জালাল উদ্দিন, সুনামগঞ্জের নাট্যকার খলিল রহমান, নাট্যব্যক্তিত্ব সবুজ রহিম, জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী প্রমুখ। আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন থিয়েটার সুনামগঞ্জের সভাপতি দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী।
‘অপেক্ষার ৪৩ বছর’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী, দ্বিপান্বিতা দে, তাজকিরা হক, রায়হান আলীম, সনি চন্দ, সোহানুর রহমান সোহান, জাহিদ হাসান, প্রিয়া রহমান, অভিনন্দা পূজা, নাজিবা জাইবা হক দিবা, বায়েজিদ আল সামায়ুন, মাজহারুল ইসলাম মোহাগ, সাব্বির আহমদ, পার্থ সাহা, মাজহারুল ইসলাম শিপন আহমেদ, ফাহমিদা ফাইজা হক ইরা, রনি তালুকদার, এনামুল হক জুবের, আয়াতুল করিম, নাজিয়া সানাম, সাদিকুর রহমান, সীমা আক্তার। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন সোহেল রানা ও রিতা আচার্য।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক এ আর জুয়েল, থিয়েটার সুনামগঞ্জের উপদেষ্টা রবিউল ইসলাম পুলক, কানিজ সুলতানা, নন্দিতা দে বাবলী, শাহ রুবেল আহমেদ, অ্যাডভোকেট এনাম আহমেদ, সুনামগঞ্জ থিয়েটারের দলনেতা মঞ্জু তালুকদার, লোকদল শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি বিধান চন্দ্র বণিক বাঁধন, সুনামগঞ্জ উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, রঙ্গালয় থিয়েটারের দলনেতা মেহেদী হাসান, আবৃত্তি শিল্পী দেবাশীষ তালুকদার শুভ্র, বন্ধন থিয়েটারের সভাপতি সামির পল্লব।
নাটক শুরুর আগে কবিতা আবৃত্তি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজিয়া হক ফারিন ও আবৃত্তি শিল্পী রবিউল ইসলাম পুলক।