বরগুনায় চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন, বিক্ষোভ
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা জেলা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক এবং জেলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন, কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচি। আজ রোববার বিকেল ৫টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বরগুনা জেলা স্কুলের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, চিকিৎসকের অবহেলায় তাদের সহপাঠীর মৃত্যু হয়েছে এবং এ ঘটনায় চিকিৎসকের বিচার না হয়ে উপরন্তু রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে যা মানবতাবিরোধী। এ সময় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে স্লোগান দিতে থাকে শত শত শিক্ষার্থী।
এর আগে গত ১৯ জুন বুধবার রাতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে আব্দুল্লাহ (১৪) নামের এক রোগী ভর্তি হয়। সে বরগুনা জেলা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বমির পাশাপাশি আব্দুল্লাহর রক্তচাপ আকস্মিকভাবে কমে আসায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মশিউর রহমান।
চিকিৎসকদের দাবি, অসুস্থ আব্দুল্লাহকে বরিশাল না নিয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে অবস্থান করায় রাত ১২টার দিকে আব্দুল্লাহর মৃত্যু হয়। এর পর পরই রোগীর স্বজনরা কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মশিউর রহমানের ওপর হামলা চালায়। পরর দিন সকাল থেকে কর্মবিরতি দিয়ে মানববন্ধন করেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অফিস সহকারীরা। এতে দুর্ভোগে পড়েন হাসাপাতালে আসা শত শত রোগী ও তাদের স্বজনরা।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সাইফুল ইসলাম শাকিল জানান, বমির সাথে লো প্রেশার (নিম্ন রক্তচাপ) নিয়ে ভর্তি হয় আব্দুল্লাহ। তাকে সম্ভব সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়ার পরও যখন তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না তখন তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মশিউর রহমান। রোগীর স্বজনরা তাকে বরিশাল না নিয়ে বরং চিকিৎসকের ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে আব্দুল্লাহর মৃত্যু হলে ডা. মশিউর রহমানকে নির্মমভাবে মারধর করেন রোগীর স্বজনরা। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা প্রতিদিন এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবেন বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় লাঞ্ছিত চিকিৎসক ডা. মশিউর রহমান বাদী হয়ে গত শুক্রবার মৃত আব্দুল্লাহর বড় ভাই সাইফুল ইসলামসহ অজ্ঞাত আরো চারজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।
এদিকে আন্দোলনরত জেলা স্কুলের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী সাহাব জানায়, দুপুরের দিকে আমড়া খাওয়ার পরে পেট ব্যথা হয় জেলা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহর। এরপর পেট ব্যথা কমাতে সেভেন আপ খায় সে। তারপর আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে আব্দুল্লাহ। বিকেলের দিকে তাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর কোনো চিকিৎসক তার চিকিৎসা না দেওয়ায় এক রকম অবহেলার কারণেই তার মৃত্যু হয়।
মৃত আব্দুল্লাহ বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের লাকুরতলা গ্রামের দ্বীন আলী হাওলাদারের ছোট ছেলে।
বরগুনায় চিকিৎসক ডা. মশিউর রহমানের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার প্রতিবাদে বিএমএ পাবনা জেলা শাখার মানববন্ধন। ছবি : এনটিভি
চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে পাবনায় বিএমএর মানববন্ধন
পাবনায় এনটিভির সাংবাদিক এ বি এম ফজলুর রহমান জানান, ‘চিকিৎসকদের নিরাপদ কর্মস্থল চাই, ডাক্তার নির্যাতনে কোনো আপস নাই’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে বরগুনায় চিকিৎসক ডা. মশিউর রহমানের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) পাবনা জেলা শাখা। এ ঘটনার প্রতিবাদে পাবনা সদর হাসপাতালের ফটকের সামনে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
পাবনা জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. আকসাদ আল মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রঞ্জন কুমার দত্ত। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএমএর দপ্তর সম্পাদক ডা. বিপ্লব কুমার সাহা, ডা. আহমেদ তাউস, ডা. সাইফুদ্দিন এহিয়া, ডা. শাহিন ফেরদৌস শানু, ডা. ফয়সাল জিন্নাত, ডা. সায়েমুল, ডা. জাকারিয়া খান মানিক, ডা. মাহমুদুর রশিদ পলাশ, পাবনা মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. অদ্বিতীয় দে প্রমুখ।
একজন কর্তব্যরত চিকিৎসকের ওপর ন্যক্কারজনক এ হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, সরকার যদি চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দিতে না পারে, চিকিৎসকদের যদি সমাজ সম্মান দিতে না পারে তাহলে এ দেশে কীভাবে ভালো চিকিৎসা সম্ভব। তারা বলেন, বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য খাতের যে অর্জন সেটা দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আর এসব কিছুই এসেছে চিকিৎসক আর স্বাস্থ্যকর্মীদের হাত ধরে। মানববন্ধনে জেলার চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।