প্রিপেইড মিটারে দুর্নীতি তদন্তে কুয়েট-বুয়েট প্রকৌশলীদের নিয়ে তদন্ত কমিটি

Looks like you've blocked notifications!
সোমবার খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শফিক উদ্দিন। ছবি : এনটিভি

বিদ্যুৎ খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) প্রিপেইড মিটারের অনিয়ম ও প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি নিয়ে খুলনায় নাগরিকদের লাগাতার কর্মসূচির মুখে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রতিনিধি রাখা হবে বলেও জানানো হয়।

সোমবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব জানান ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শফিক উদ্দিন।

প্রিপেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটিসহ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছে। কমিটির আহ্বায়ক বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা শাখার সভাপতি ডা. বাহরুল আলম সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে প্রিপেইড মিটারে দুর্নীতি ও হয়রানির সুনির্দিষ্ট ১২টি পয়েন্ট তুলে ধরে এগুলো নিরসনে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়া ওই কমিটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালনসহ ঊর্ধ্বতন মহলে স্মারকলিপি দেয়।

প্রিপেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিনামূল্যে প্রিপেইড মিটার দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে সিঙ্গেল ফেজ মিটারে ৪০ টাকা ও থ্রি ফ্রেজ মিটারের জন্য ২৫০ টাকা প্রতি মাসে কেটে নিচ্ছে ওজোপাডিকো। এ ছাড়া ডিজিটাল মিটারের টাকা অপরিশোধিত রেখে প্রিপেইড মিটারের বিলের সঙ্গে আগের মিটারের ভাড়ার টাকা কেটে রাখা হচ্ছে। একে অনন্তকালের দুর্নীতি হিসেবে আখ্যা দেয় কমিটি।

ডা. বাহরুল আলম জানান, প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার সঙ্গে সঙ্গে রিচার্জের টাকা ও বিভিন্ন খাতে কেটে নেওয়া টাকার মধ্যেও ব্যাপক গড়মিল রয়েছে।

প্রিপেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির অভিযোগ, ওজোপাডিকোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এতটাই বেপরোয়া যে গ্রাহকরা এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা চাইলে তারা উত্তেজিত হয় এবং অনীহা প্রকাশ করে। গ্রাহকদের সন্দেহ যে, ওজোপাডিকোর ব্যবহৃত সফটওয়ার এমনভাবে তৈরি যা গ্রাহকের রিচার্জের টাকা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে ত্রুটিযুক্ত ও দুর্নীতিগ্রস্ত।

এসব দুর্নীতি ও হয়রানির ব্যাখ্যা দিতে সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে জর্জড়িত হন ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শফিক উদ্দিন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে বারবার প্রিপেইড মিটার ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে প্রশ্ন না করার অনুরোধ জানান। প্রিপেইড মিটারে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেওয়ার পর তিনি সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, প্রিপেইড মিটারগুলো পরীক্ষা করতে কুয়েট ও বুয়েটের প্রকৌশলীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। তিনি এ কমিটিতে সাংবাদিক ও বিদ্যুৎ গ্রাহককেও থাকার প্রস্তাব করেন।

এর আগে লিখিত বক্তব্যে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, প্রকৃতপক্ষে বিদ্যুৎ চুরি রোধ করতেই এই প্রিপেইড মিটার। আর প্রিপেইড মিটারের ৪০ টাকা মাসিক ভাড়া রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গ্রহণ করা হয় বলে জানান তিনি। তিনি দাবি করেন, স্মার্ট প্রিপেইড মিটার শটসার্কিটজনিত দুর্ঘটনা রোধ করে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহার নিরাপদ করে।

দীর্ঘদিন ধরে প্রিপেইড মিটার নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর এই প্রথম ওজোপাডিকোর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে অবস্থান ব্যক্ত করা হলো।