যুদ্ধাপরাধ : রণদা প্রসাদকে হত্যার দায়ে আসামির মৃত্যুদণ্ড

Looks like you've blocked notifications!

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহাকে হত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলার একমাত্র আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে ২৩৫ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্ত রূপ পড়া শুরু করেন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করেন।

ট্রাইব্যুনাল মামলার একমাত্র আসামি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেকটিতেই তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।

গতকাল বুধবার ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের  বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নারায়ণগঞ্জে রণদা প্রসাদ সাহাকে হত্যা করা হয়। আসামি টাঙ্গাইলের মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগ আনা হয়। গত ২৪ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখে আদেশ দেন।

এ মামলায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাপস কান্তি বল। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তানিম।

২০১৮ সালের ২৮ মার্চ মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি এই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালান। অভিযানে রণদা প্রসাদ সাহা, তাঁর ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও রণদা প্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ সাতজনকে অপহরণ করে নিয়ে যান। পরে সবাইকে হত্যা করে মরদেহ  নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর তাঁদের মরদেহ আর পাওয়া যায়নি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও এর আশপাশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউস এলাকায় অপরাধ সংঘটন করেন। রণদা প্রসাদ সাহার পৈতৃক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। একসময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন রণদা প্রসাদ সাহা। তিনি থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদীখানে। সে বাড়ি থেকেই তাঁকে, তাঁর ছেলে ও অন্যদের ধরে নিয়ে যান আসামি মাহবুবুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা।

আসামি মাহবুবুর রহমানের বাবা আবদুল ওয়াদুদ মুক্তিযুদ্ধের সময় মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। মাহবুবুর রাহমান ও তাঁর ভাই আবদুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন।

আসামি একসময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ছিলেন। তিনি নির্দলীয়ভাবে তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রতিবারই পরাজিত হন।