‘প্রতিদিন ফাগুনেরা প্রাণ হারাচ্ছে’

Looks like you've blocked notifications!
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সাংবাদিক ফাগুন রেজা হত্যার বিচারের দাবিতে জড়ো হন সাংবাদিকরা। ছবি : এনটিভি

সন্তান সাংবাদিক ইহসান ইবনে রেজা ফাগুনের (ফাগুন রেজা) বিচার চাইতে মানববন্ধনে দাঁড়ালেন বাবা কাকন রেজা। সন্তানের বিচারের দাবিতে মানববন্ধনে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চোখ ভিজে গেল সাংবাদিক পিতার। অশ্রুশিক্ত নয়নে মানববন্ধনে কথা বলতে শুরু করলেও বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেননি তিনি। পুরো মানববন্ধনের পরিবেশ তখন ভারি হয়ে উঠে।

কথা বলার এক পর্যায়ে কাকন রেজা বলেন, ‘আমি ফাগুন রেজার বিচার চাইছি না। আমি এসেছি অন্য ফাগুনের বিচার চাইতে। প্রতিদিন ফাগুনেরা প্রাণ হারাচ্ছে। আমার সামনের ফাগুনেরা (সাংবাদিক) যে কবে প্রাণ হারাবেন সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করছি। এদেশে কোনো সৎ সাংবাদিকই নিরাপদ নয়।’

আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক ফাগুনের হত্যারহস্য উন্মোচনের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন কাকন রেজা। মানববন্ধনে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের সাংবাদিকরা অংশ নেন।

কাকন রেজা বলেন, ‘আমার ছেলেকে দেড় মাস হলো হত্যা করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের সত্য উদঘাটনে কোনো অগ্রগতি নেই। ‘আমরা (সাংবাদিক) কোনোভাবেই সংগঠিত কার্যক্রম নেই। আমরা এগুলোর ফলোআপ করিনা বলে এই অবস্থা। আমরা কেউ এই রাষ্ট্রে নিরাপদ নই। আমি শুধু আমার ছেলের হত্যারহস্য উন্মোচন হোক সেটা চাই।’

মানবন্ধনে ফাগুন রেজার পরিবার-পরিজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, সহকর্মী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শুরুতে কথা বললেন ফাগুনের সহকর্মী প্রদীপ দাস। কথা বলতে গিয়ে বারবার কেঁদে ফেলছিলেন তিনি।

কাঁদতে কাঁদতে প্রদীপ দাস বলেন, ‘একটি ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে ফাগুন রেজা খবর প্রকাশ করেছিল। তারপর তাকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি মাথানত করেনি কোনোভাবেই। এই সেই সৎ সাংবাদিক ফাগুন রেজা। প্রশাসন আজ পর্যন্ত বের করতে পারলো না, ফাগুন শেরপুরে বাসে নাকি ট্রেনে যাচ্ছিলেন। এই সরকার একটি অকার্যকর সরকার। নিজের জীবন রক্ষার্থে আপনারা রাস্তায় নেমে আসুন।’

এদিকে সাংবাদিক ফাগুন হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত, দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকারে নিপতিত হবে। একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়ার কারণেই পরবর্তীতে বিভীষিকাময় আরো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। সাংবাদিক ফাগুন হত্যার রহস্য উম্মোচন জরুরি। সমাজে ন্যায়বোধ প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা জরুরি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করব, আপনাদের ইমেজ রক্ষার স্বার্থে হলেও সাংবাদিক ফাগুনের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করুন এবং বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। এটি করতে ব্যর্থ হলে জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘বারবার সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে। এভাবে একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না। সাংবাদিক ফাগুন হত্যার বিচার করতে হবে এই রাষ্ট্রকে। নতুবা আমরা আগামীতে আরো বড় বড় কর্মসূচি দেব।’

গত ২৭ মে রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র ও সাংবাদিক ইহসান ইবনে রেজা ফাগুন (ফাগুন রেজা) দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন। ওইদিন তিনি ঢাকা থেকে শেরপুরের বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন। জামালপুরের নান্দিনা মধ্যপাড়া রেললাইনের পাশ থেকে ফাগুনের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ফাগুন রেজা এনটিভির শেরপুর জেলা প্রতিনিধি ও কলাম লেখক কাকন রেজার বড় ছেলে। এ ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ এখনো পর্যন্ত এর সুষ্ঠু তদন্ত ও আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

তরুণ সাংবাদিক ফাগুন হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীসহ শেরপুর ও জামালপুরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছে। এরই্ অংশ হিসেবে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে সাংবাদিকরা।