গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক : রেজা কিবরিয়া
দেশে যে হারে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া। অবিলম্বে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে যে হারে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সরকারের দুর্নীতি, অদক্ষতা ও দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতার জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জনগণের ওপর নতুন বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে রান্নার গ্যাসের জন্য চুলাভিত্তিক গ্রাহকদের প্রতি মাসে ২৩ শতাংশ এবং মিটারভিত্তিক গ্রাহকদের ৩৮ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে যাঁরা সিএনজি ব্যবহার করেন, তাঁদের খরচ বাড়বে সাড়ে ৭ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসবের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৫ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত। গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়বে, শিল্পোৎপাদনে খরচ বাড়বে।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে এই সরকার আবার প্রমাণ করল যে তারা জনগণের স্বার্থে দেশ পরিচালনা করছে না। দেশের মানুষের বুঝতে বাকি নেই যে এই জনপ্রতিনিধিবিহীন সরকার জনগণের কষ্ট গ্রাহ্য করে না।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম গতকাল রোববার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে বাসাবাড়িসহ সব শ্রেণির গ্রাহকের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেন, যা আজ সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
গ্যাসের নতুন মূল্যবৃদ্ধির ফলে আবাসিক গ্রাহকদের রান্নাঘরে যাদের এক চুলা আছে, তাদের ৭৫০ টাকার পরিবর্তে প্রতি মাসে দিতে হবে ৯২৫ টাকা। আর দুই চুলার গ্রাহকদের প্রতি মাসে ৮০০ টাকার পরিবর্তে দিতে হবে ৯৭৫ টাকা।
গৃহস্থালিতে যাদের গ্যাসের মিটার রয়েছে, তাদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহারের জন্য ৯ টাকা ১০ পয়সার পরিবর্তে ১২ টাকা ৬০ পয়সা করে দিতে হবে। মিটারে ৩৮.৪৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে।
বিইআরসি প্রধান বলেন, গড়ে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭.৩৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গ্যাসের বর্ধিত মূল্য অনুযায়ী, যানবাহনে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম সোমবার থেকে প্রতি ঘনমিটারে ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৩ টাকা হবে। সিএনজি স্টেশনগুলো গ্যাসের জন্য সরকারকে প্রতি ঘনমিটারে ৩২ টাকার পরিবর্তে ৩৫ টাকা করে দেবে।
বাণিজ্যিক ভোক্তারা যেমন রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, শিক্ষার্থী হোস্টেল, হোস্টেলগুলোকে প্রতি ঘনমিটারের জন্য ১৭.০৪ টাকার পরিবর্তে ২৩ টাকা দিতে হবে।
শিল্পকারখানাগুলোতে গ্যাসের মূল্য ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মালিকদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ৭.৭৬ টাকার পরিবর্তে ১০.৭০ টাকা দিতে হবে। চা বাগানের ক্ষেত্রেও একই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে গ্যাসের মূল্য বাড়েনি।
সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য গ্যাসের মূল্য ৪৩.৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য হবে ৩.১৬ টাকার পরিবর্তে ৪.৪৫ টাকা। সার কারখানাগুলোতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য হবে ৪.৪৫ টাকা, যা আগে ছিল ২.৭১ টাকা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দ্রুতই বিদ্যুতের দামও বাড়বে।
বিইআরসি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির কারণে যে লোকসান হচ্ছে, তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য গ্যাসের মূল্য ৭৫ শতাংশ বাড়ানো প্রয়োজন।
‘এলএনজি আমদানির কারণে যে লোকসান, তা পূরণে অতিরিক্ত ১৮ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা প্রয়োজন।’
তবে মিজানুর রহমান বলেন, ৩৩ শতাংশ, অর্থাৎ আট হাজার ৬২০ কোটি টাকা ভোক্তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে এবং ২৯ শতাংশ, অর্থাৎ সাত হাজার ৬৯০ কোটি টাকা সরকার থেকে ভর্তুকি দেওয়া হবে, বাকি দুই হাজার ৪২০ কোটি টাকা ভোক্তাদের টাকায় গঠিত গ্যাস উন্নয়ন ফান্ড থেকে দেওয়া হবে।
বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতিদিন ৮৫০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট (এমএমসিএফডি) এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে ধরে নিয়ে এই হারে মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছিল।