ছিনতাইয়ে চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল অপহরণের অভিযোগে আটক!

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীতে মোটরসাইকেল চালককে অপহরণের অভিযোগে আটক পুলিশ কনস্টেবলের পদ থেকে চাকরি হারানো গোকুল চন্দ্র রায়। ছবি : এনটিভি

ছিনতাইয়ের অভিযোগে ২০১২ সালে পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি হারান গোকুল চন্দ্র রায়। চাকরিচ্যুত হলেও ছিনতাই ও অপহরণের মতো অপরাধ থেকে দূরে থাকেননি তিনি। অবশেষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশ থেকে মনিরুল ইসলাম (৩০) নামের এক মোটরসাইকেল চালককে পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ করেন। পরে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে ভুক্তভোগীর পরিবারের সহায়তায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ গোকুলকে রাজধানীর কলেজগেট থেকে আটক করে।

বুধবার ভোররাত ৪টার দিকে কলেজগেটের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের কাছ থেকে মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাসানুর রহমান তাকে আটক করে। পরে ভুক্তভোগী মনিরুল ও এসআই হাসানুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

মনিরুল ইসলাম থাকেন রাজধানীর মিরপুর। উবারে মোটরসাইকেল চালানোর জন্য তিনি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা থেকে ঢাকায় এসেছেন। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে এক যাত্রীকে নামিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন মনিরুল ইসলাম। এমন সময় আমিনুল ইসলাম ইমন নামের একজন মোটরসাইকেল নিয়ে মনিরুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। সেখান থেকে মনিরুল ইসলাম চলে যাচ্ছিলেন। এমন সময় গোকুল চন্দ্র রায় তাঁকে থামান। পুলিশের পরিচয়পত্র দেখিয়ে তিনি মনিরুল ইসলামকে বলেন, ‘তুই ইয়াবার ব্যবসা করিস। চল, থানায় চল। আগারগাঁওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি আছে। এই দেখছস পুলিশের আইডি কার্ড। তোকে চালান দেব।’

উপরের কথাগুলো বলে গোকুল চন্দ্র রায় মনিরুল ইসলামকে মোটরসাইকেল চালাতে বলে পেছনে বসেন। আমিনুল ইসলাম ইমন তার সাথে থাকা মোটরসাইকেল নিয়ে সামনের দিকে যেতে থাকেন। আমিনুল ইসলাম ইমন তখন মনিরুলকে বলেন, ‘আমার পিছু পিছু আয়। আমি যেদিকে যাব তুইও সেদিকে যাবি।’ এভাবে মনিরুলকে নিয়ে যান সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ভেতরে। সেখানে নিয়ে মনিরুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকার ব্যবস্থা করতে বলেন গোকুল। তখন গোকুল মনিরুলকে বলেন, ‘দ্রুত টাকার ব্যবস্থা কর। কীভাবে দিবি জানি না। টাকা না দিলে তোকে মেরে ফেলব।’

বিপদে পড়ে মনিরুল ইসলাম সাতক্ষীরায় থাকা তাঁর বাবাকে এই ঘটনা জানান। টাকার ব্যবস্থা করতে করতে রাত ১১টা পার। ৪০ হাজার টাকার ব্যবস্থা করেন তাঁর পরিবার। কিন্তু রাত ১১টার পর বিকাশের কোনো দোকান খোলা না থাকায় বিপত্তি বাধে। এরপর সাবেক ওই পুলিশ কনস্টেবল মনিরুলকে মারা শুরু করেন। এর ভেতরে মনিরুল ঢাকাতে থাকা তাঁর আত্মীয়-স্বজনকে দ্রুত ১০ হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু কোথায় আছে এই তথ্য গোকুল তাঁকে জানাতে দিচ্ছিল না। তবে অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতায় মোবাইল ট্র্যাকিং করে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন যে, তাঁকে নিয়ে কলেজগেটে রাখা হয়েছে। এসব কথা জানান ভুক্তভোগীর ভাতিজা আমিরুল ইসলাম আমির।

এদিকে বিকাশে টাকা আসতে দেরী হচ্ছে বলে ভুয়া পুলিশ কর্মকর্তা সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার এক ব্যক্তির কাছে মুক্তিপণের ওই টাকা দিতে বলেন। কলারোয়া থানার ওই ব্যক্তির সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরিবারের এই নিয়ে বাকবিতণ্ডাও হয়।

এর ভেতরে এই ঘটনাকে অপহরণ মনে করে মনিরুলের ভাতিজা আমিরুল ইসলাম আমির প্রথমে আদাবর থানায় ঘটনাটি জানান। কিন্তু আদাবর থানা কোনো সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ করেন আমির। এরপর র‍্যাব-৪ এ গিয়ে রাতে এ ঘটনা জানান তিনি। র‍্যাব-৪ থেকেও মামলা করার আগে সরাসরি অভিযানে যেতে চাননি বলেও জানান আমির। কোথাও কোনো উপায় না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় ঘটনা জানান। ঘটনা শুনে তখন এসআই  হাসানুর রহমান কলেজগেট থেকে গোকুল চন্দ্র রায়কে আটক করেন। তবে গোকুলের সাথে থাকা আমিনুল ইসলাম ইমন পালিয়ে যান। সে সময় গোকুল চন্দ্রের কাছ থেকে তার পরিচয়পত্র (পুলিশ থাকাকালীন পরিচয়পত্র), দুটি মোবাইলসহ একটি ডায়েরি (সাংবাদিক এবং পুলিশের ঠিকানা লেখা) জব্দ করেন।

মোহাম্মদপুর থানায় নিয়ে এসআই হাসানুর রহমান গোকুল চন্দ্র রায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে হাসানুর বলেন, ‘সে আগে পুলিশে চাকরি করতো। তার বিরুদ্ধে থাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার চাকরি চলে যায়। তার সাথে থাকা আইডি কার্ডটি আগের কার্ডের স্ক্যান কপি। মানে কার্ড জমা দেওয়ার আগে কার্ডটি স্ক্যান করে রেখে দেওয়া।’

হাসানুর রহমান আরো বলেন, ‘ঘটনা শুনেই আমি চলে যাই কলেজগেটে। সেখানে গিয়ে ভোর ৪টার সময় আমি তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। আটককৃত গোকুলের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে এটা তার পেশা। এবং এদের বিশাল বড় সিন্ডিকেট আছে।’

মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে এই প্রতিবেদক কথা বলেন অপহরণকারী গোকুল চন্দ্র রায়ের সঙ্গে। তখন তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘২০০২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আমি পুলিশে জয়েন করি। ২০১২ সালে ছিনতাইয়ের একটি মামলায় আমার চাকরি চলে যায়। তবে পুনরায় আমার চাকরি ফিরে পাওয়ার সুযোগ সামনে এসেছে। মেডিকেলও হয়ে গেছে। পুলিশ যদি আমাকে ক্ষমা করে দেয় তাহলে আমার চাকরিটা হবে। নতুবা চাকরি হবে না।’

অপহরণের কাজ কবে থেকে করেন? আপনার সাথে থাকা ব্যক্তিটি কে-এমন প্রশ্নে গোকুল বলেন, ‘আমি এখন আর কিছু করি না। আমার সাথে থাকা লোকটি সাংবাদিক। নাম আমিনুল ইসলাম ইমন। দৈনিক দিন প্রতিদিন পত্রিকায় চাকরি করে। ওই লোক আমাকে ডেকে ডেকে এসব কাজ করায়। আজ ধরা খেয়েছি।’

এদিকে বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মোহাম্মদপুর থানার এসআই হাসানুর রহমান আসামি ও ভুক্তভোগীকে শেরে বাংলা থানার এসআই মামুনের কাছে হস্তান্তর করেন। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের লোকজন থানায় ছিলেন। কিন্তু মামলা রুজু করেনি শেরে বাংলা থানা। তবে থানার এসআই নুরুল ইসলাম মামলা রুজু করার প্রস্তুতি নিয়ে এজাহার লিখে রাখছেন বলে জানান ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম।

কেন মামলা নেওয়া হয়নি- এমন প্রশ্নে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘একজন আসামি (গোকুল) আমাদের কাছে আছে। আর একজন আসামি পলাতক। তবে তার একটি ভিজিটিং কার্ড (সাংবাদিক) আমরা পেয়েছি। কিন্তু তার স্থায়ী ঠিকানা আমরা পাইনি এখনো। আটককৃত আসামিকে নিয়ে আমরা অভিযানে যাব। তাকে আটক করে কাল মামলা নেব।’ 

কেন মামলা নেওয়া হয়নি- এমন প্রশ্নে শেরে বাংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ‘আমরা আমাদের গতিতে চলছি। অবশ্যই মামলা নেব। রাতে অভিযানে যাব। তাকে আটক করে মামলা নেব আমরা।’