জাহাঙ্গীরনগরে ইতিহাস অলিম্পিয়াডের আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত

Looks like you've blocked notifications!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে আজ শুক্রবার সকালে দেশের প্রথম ইতিহাস অলিম্পিয়াডের আঞ্চলিক পর্বের উদ্বোধন করা হয়। ছবি : সাহাদাত পারভেজ

‘নিজের শেকড়কে জানো, নিজেকে সমৃদ্ধ করো’–এই স্লোগানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে দেশের প্রথম ইতিহাস অলিম্পিয়াডের আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংগঠন মুক্ত আসরের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন কমিটির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল ভূঞা। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমরান জাহান, মুক্ত আসরের উপদেষ্টা অধ্যাপক রাশেদা নাসরীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আবেদা সুলতানা, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাহাদাত পারভেজ, আশফাকুজ্জামান, সংগীতা আচার্য, মাহমুদ ইকবাল, হিমেল হোসেন, সাইফুল্লাহ সাদেক প্রমুখ।

এরপর সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত স্কুল অ্যান্ড কলেজে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা উত্তর, সাভার, ধামরাই, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলার ৩০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় চারশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়।

এরপর দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে শুরু হয় আলোচনাসভা। সভায় কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিনের সংগ্রামে গড়ে তোলা ইতিহাস একটি জাতির পরিচয়কে তুলে ধরে। বাঙালি জাতি ইতিহাসে সেই পরিচয়ের জায়গাটা গড়ে তুলেছে। যার মাধ্যমে আমরা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। বাঙালি যেখানেই যাক না কেন, বাঙালি জাতিসত্তাকে ধারণ করে, বাঙালি সংস্কৃতির সবটুকু ধারণ করেই তাকে থাকতে হবে। তা না হলে মানুষের যে মর্যাদা তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন, যা বাঙালিকে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছে। তাই নিজের পরিচয়ের প্রশ্নে তোমরা কখনোই নিজেকে ক্ষুদ্র মানুষ মনে করবে না। তোমরা ইতিহাস যখন জানবে, জীবনের সত্যকে যখন জানবে, তখন মর্যাদার সঙ্গে নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করে তুলতে সমর্থ হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এমরান জাহান বলেন, ‘ইতিহাস একটি জাতির গৌরব। দেশ, ঐতিহ্য, সংগ্রাম, লোকসংস্কৃতি- এসব মিলেই ইতিহাস। নিজের শিকড়কে জেনে নিজেকে সমৃদ্ধ করা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেজন্য ইতিহাসের চর্চা থাকতে হবে। এ ধরনের আয়োজন সে পথকে সুগম করে।’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহমেদ হেলাল বলেন, ‘মানুষকে মানসিকভাবে দৃঢ় হতে হলে নিজের শেকড়ের ইতিহাস জানতে হবে। জানতে হবে প্রোমিথিউসের ইতিহাস, কেন তিনি সূর্যকে ছিনিয়ে এনে ছিলেন।’

আলোচনাসভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক। আলোচনাসভা শেষে চারটি ক্যাটাগরিতে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শীর্ষ ১০ জন করে মোট ৪০ জন শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় বই, ক্রেস্ট ও সনদ। বিজয়ীরা জাতীয় অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সাদিয়া রশ্মি সূচনা। আয়োজনটি সহযোগিতা করে ইমপ্রেস কমিউনিকেশন, নীলপদ্ম, বিজ্ঞানচিন্তা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ।