কুমিল্লায় আদালতকক্ষেই আসামিকে ছুরি মেরে হত্যা
হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে এসেছিলেন দুই আসামি। চলছিল সাক্ষ্য গ্রহণ। ঠিক এ সময় বিচারকের সামনেই বিতণ্ডার জেরে ছুরি নিয়ে এক আসামি অন্য আসামিকে ধাওয়া করেন। দৌড়ে জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নেন অন্য একটি আদালতে। সেখানে গিয়েই ঘাতক উপর্যুপরি ছুরি মারতে থাকেন। এতে ওই আসামি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতে ওই ঘটনা ঘটে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
নিহত ব্যক্তির নাম ফারুক। তিনি লাকসাম উপজেলার বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রি। এ ঘটনায় হাসান নামের অপর এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকেই হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। সম্পর্কে উভয়ে আপন মামাতো-ফুফাতো ভাই।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) নুরুল ইসলাম জানান, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট ঘটে যাওয়া একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন হাসান ও ফারুক। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরাটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সুপারের ভাষ্যে হত্যার বিবরণ
দুপুরে আদালত চত্বরেই ঘটনার বর্ণনা দেন পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আজ একটা হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ তৃতীয় জজ আদালতে। এ মামলার দুই আসামির একজনের নাম হচ্ছে হাসান, আরেকজনের নাম ফারুক। দুজনই হচ্ছে মামাতো-ফুফাতো ভাই। দুজনেই জামিনে ছিলেন, হাজিরা দিতে এসেছেন।’
‘দুজনের ভেতরে মামলা নিয়ে গ্যাঞ্জাম। যে ছুরিকাঘাত করেছে, সেই হাসান মনে করেন যে তিনি নির্দোষ। এবং তিনি ফারুকের কারণে এ মামলার আসামি হয়েছেন। ফারুক মার্ডারটা করেছেন। ফারুকের কারণে হাসানও এ মামলায় জড়িয়ে গেছেন। এটা হাসানের ধারণা।’
জেলা পুলিশ সুপার আরো বলেন, “হাসান যখন আদালতে হাজিরা দিতে আসেন, তার আগে ফারুককে ফোন করে হাসান বলছেন, ‘হাজিরা দিতে হবে না? না হলে তো বেল (জামিন) কেটে দেবে।’ ফারুক বলেন, ‘আমি যেতে পারব না।’ তখন থেকেই কথাকাটাকাটি হচ্ছে।”
কথাকাটাকাটির জের ধরে উত্তপ্ত অবস্থায় দুজন দুভাবে (আদালতে) এসেছেন বলেও গণমাধ্যমকে জানান জেলা পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘হাসান ফারুককে স্ট্যাব করবে, এ কারণে কোমরের মধ্যে একটা ছুরি নিয়ে এসেছেন। এজলাসের ভেতর দুজন একত্রে দাঁড়িয়েছেন। এজলাসের ভেতর হাসান ফারুককে স্ট্যাব করার জন্য ধাওয়া করেছেন। একটা পর্যায়ে ফারুক দৌড় দিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও দৌড় দিয়েছে।’
‘দৌড়ে তৃতীয় জজ আদালতের ভেতরে ঢুকে স্ট্যাব করেছেন এবং একটা পর্যায়ে ফারুক পড়ে যান। তখন উপর্যুপরি ফারুকের ওপর স্ট্যাব করতে থাকেন। ফারুকের গায়ে তিন-চারটা স্ট্যাবের দাগ পেয়েছি। হাসানকে গ্রেপ্তার করেছি, একই সঙ্গে চাকুটা উদ্ধার করেছি,’ যোগ করেন সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
পুলিশ গ্রেপ্তারের পর হাসানের প্রাথমিক জবানবন্দি নিয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘হাসান এই কথাগুলোই বলেছেন, তিনি মনে করেন তিনি নির্দোষ। তিনি ফারুকের কারণে এই মামলার আসামি হয়েছেন, হয়রানি হচ্ছেন। সে কারণেই ফারুকের ওপর তাঁর ক্ষোভ। এই ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছে এই আদালতের ভেতরে এসে।’