চাকরি নয়, রিনা ছুটেছেন মাল্টার পেছনে

Looks like you've blocked notifications!
নিজের মাল্টা বাগান মায়াকাননে নওগাঁর ধামইরহাটের নারী উদ্যোক্তা রিনা আক্তার। ছবি : এনটিভি

স্নাতক পাসের পর চাকরি না হওয়ায় একপর্যায়ে নিজের জমিতে ফলবাগান গড়ে তোলার কাজে নেমে পড়েন তিনি। বাগানের নাম দেন ‘মায়া কানন’। আজ সেই বাগানে চাষ করা মাল্টার বদৌলতে সফল নারী উদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছেন রিনা আক্তার। 

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার বরেন্দ্র অঞ্চল আঙ্গরত তেলিপাড়া গ্রামে তিন একর জায়গাজুড়ে রিনার ‘মায়া কানন’। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সারা বাগান ভরে আছে ফলবতী মাল্টা গাছে। আসন্ন মৌসুমে বাজারে উপযুক্ত দাম পেলে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

মাল্টা চাষের নেপথ্যের গল্প জানাতে গিয়ে রিনা বলেন, গ্র্যাজুয়েশনের পর অনেক চেষ্টা করেও চাকরি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। এরই একপর্যায়ে চাকরির চিন্তা বাদ দিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার কথা মাথায় আসে তাঁর। কৃষিপ্রেমী পরিবারে বেড়ে ওঠার ফলে ছোটবেলা থেকেই ফলবাগান গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল তাঁর। বেকারত্বের গ্লানি ঝেড়ে ফেলে এবারে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে উদ্যোগী হন তিনি।

রিনা বলেন, ‘২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. জামাল উদ্দিন ও বর্তমান কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সেলিম রেজার সার্বিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় আমি ৫০ শতাংশ জমিতে এক বছর বয়সী চারাগাছ দিয়ে উন্নত মানের মাল্টা চাষ শুরু করি। ১০ ফুট পর পর মোট ১৩৬টি চারাগাছ রোপণ করা হয়। পরের বছর গাছে ফুল এলেও তা ভেঙে দেওয়া হয়। তারই সূত্রে এ বছর পর্যাপ্ত ফুল আসে। বর্তমানে প্রত্যেক গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। আশা করা যাচ্ছে, গাছপ্রতি ১০ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে।’

‘আগামী আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ফল নামানো শুরু হবে। বাজারে বর্তমানে পাইকারি মাল্টা ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। সে অনুযায়ী ১০০ টাকা কেজি দরে প্রতি গাছ থেকে ১০ কেজি মাল্টা পাওয়া গেলেও এক হাজার টাকা করে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ ১৩৬টি গাছ থেকে অন্তত এক লাখ ৩৬ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তবে এ মৌসুমেই মাল্টা বিক্রি করে মুনাফার আশা করছি,’ বলেন রিনা।

মাল্টা চাষের খরচ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ নারী উদ্যোক্তা জানান, ১৫০ টাকা দরে তিনি একেকটি চারা গাছ কিনেছিলেন। তাতে দাম পড়েছিল ২০ হাজার ৪০০ টাকা। পরবর্তী সময়ে শ্রমিকের মজুরি ও অন্যান্য খরচ বাবদ মোট ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ করেছেন। এ ছাড়া মাল্টা বাগান গড়ে তুলতে এককালীন ব্যয় হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এযাবৎ সর্বমোট এক লাখ ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে তাঁর। আশা করা যায়, এ বছরই ওই বিনিয়োগের বাইরে মুনাফার দেখা পাওয়া যাবে। আগামী মৌসুমে দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন তিনি।

এ মুনাফার পরিমাণ দিন দিন বাড়বে বলে জানান রিনা আক্তার। মাল্টার বাইরে ড্রাগন ফল চাষের ব্যাপারেও আগ্রহ রয়েছে বলে জানান তিনি। নিজের উদ্যোগ তাঁকে করে তুলেছে নতুন করে আরো আত্মবিশ্বাসী।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘ধামইরহাটের মাটি যেকোনো ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এ অঞ্চলের মাল্টা ও ড্রাগন ফলের মিষ্টতা ও গুণাগুণ অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভালো। বাজারে এসব ফলের ভালো দামও পাওয়া যায়। এ অঞ্চলের মানুষ শুধু ধান চাষে ব্যস্ত থাকে। বর্তমানে ধান চাষে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে এলাকার চাষিদের লাভজনক ফলবাগান গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’

‘রিনা আক্তারকে মাল্টা ও ড্রাগন ফ্রুট চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। তাঁর বাগানে মাল্টার প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। সরবরাহ করা হয়েছে উন্নত মানের মাল্টা চারা বারি-১। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত রিনাকে নানা রকম পরামর্শ দেওয়া হয়। এলাকার বেকার অনেক যুবকই রিনার বাগান দেখে ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে,’ বলেন কৃষি কর্মকর্তা। আগামীতে এ অঞ্চল ফলের এলাকা হিসেবে পরিচিতি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।