প্রিয়া সাহাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ১৪ দল

Looks like you've blocked notifications!
সম্প্রতি হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মেলান প্রিয়া সাহা। ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে প্রিয়া সাহা জঘন্য মিথ্যাচার করেছেন। এ জন্য প্রিয়া সাহাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ১৪ দল।

আজ শনিবার কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন।

বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করার পাশাপাশি কার প্ররোচণায়, কোন মহলের মদদে কথিত এই মহিলা এ ধরনের মিথ্যাচার করেছেন তা বের করা উচিত। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্রিয়া সাহার মিথ্যাচারের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক বিনষ্ট এবং নির্বাচিত সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে অশুভ চেনা মহল তাকে দিয়ে কাজটি করিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দ্রুত রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাসী জানে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সব ধর্মের মানুষ এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস এবং ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারছেন। যেটি বিশ্বে একটি বিরল দৃষ্টান্ত। তাৎক্ষণিক বক্তব্য দিয়ে বিষয়টির প্রতিবাদ জানানোর কারণে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলারকে ধন্যবাদ জানান নাসিম।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহিঞ্ঝুতার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে কথা বলেন। এতে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে এক নারী ট্রাম্পকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এখানে (বাংলাদেশে) প্রায় ৩৭ মিলিয়ন (৩ কোটি ৭০ লাখ) হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ডিসঅ্যাপেয়ার (নিখোঁজ) হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখনো সেখানে (বাংলাদেশে) ১৮ মিলিয়ন (এক কোটি ৮০ লাখ) সংখ্যালঘু মানুষ রয়েছে। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। শুধু আমাদের (বাংলাদেশে) থাকতে সাহায্য করুন। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি।’

এ সময় ট্রাম্প জানতে চান, ‘কারা জমি দখল করেছে? কারা বাড়ি দখল করেছে?’ জবাবে ওই নারী বলেন, ‘মুসলিম মৌলবাদী গ্রুপ এগুলো করছে। তারা সব সময় পলিটিক্যাল শেল্টার (রাজনৈতিক ছত্রছায়া) পায়।’

হোয়াইট হাউজের ওয়েব সাইটের বিবৃতিতে বাংলাদেশি ওই নারীকে মিসেস সাহা পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানা যায় ওই নারীর নাম প্রিয়া সাহা।

প্রিয়া সাহা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি ‘দলিত কণ্ঠ’ নামের একটি পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সে ‘দলিত কণ্ঠ’ পত্রিকায় প্রিয়া সাহার পুরো নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রিয় বালা বিশ্বাস’। বয়স দেখানো হয়েছে ৫৪ বছর। বাবার নাম মৃত নগেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। ঘোষণাপত্রে দেখা যায়, চলতি বছরের ১২ জুন ঢাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাহিদ রসুল পত্রিকাটি প্রকাশের ঘোষণাপত্র প্রদান করেন।

প্রিয়া বিশ্বাস ওরফে প্রিয় বালা বিশ্বাস তাঁর পত্রিকার ঘোষণাপত্রে ‘সরকারের স্বার্থের পরিপন্থী বা কোনো আপত্তিকর বিষয়ে আমার পত্রিকায় কোনো সংবাদ প্রকাশ হবে না’ বলে অঙ্গীকার করেছেন।

সে পত্রিকাটি ঊষা আর্ট প্রেস থেকে বর্তমানে প্রকাশিত হচ্ছে। ঘোষণাপত্রে শনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন অ্যাডভোকেট আল আমিন রিজভী।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আল আমিন রিজভী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, প্রিয়া সাহা ওরফে প্রিয় বালা বিশ্বাসের ‘দলিত কণ্ঠ’ পত্রিকায় গত ১২ জুন তিনি শনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি বলেন, এ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক রঞ্জন বকসী নুপু তাঁর পরিচিত। তিনিই প্রিয়া সাহাকে তাঁর কাছে নিয়ে আসেন।

প্রিয়া সাহা ওরফে প্রিয় বালা বিশ্বাস বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ‘শারি’র নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, থাকতেন রোকেয়া হলে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ‘মহিলা ঐক্য পরিষদ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।

এদিকে সংখ্যালঘু গুম ও নির্যাতন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার অভিযোগকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রিয়া সাহা কী উদ্দেশে এ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা অভিযোগ করে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করলেন, তা খতিয়ে দেখা উচিত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ শনিবার সকালে তাঁর বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রিয়া সাহা সংখ্যালঘু কিংবা তাঁর ওপর নির্যাতন হয়েছে, এ মর্মে কখনোই আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। তা ছাড়া তিনি পুলিশ প্রশাসনের কাছেও কোনো সময় প্রতিকার চেয়েছেন বলে রেকর্ড নেই। তার পরও তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়ে কেন এ অভিযোগ করলেন, তা আমরা দেখব।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জানান, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু বলে কিছু নেই। এখানে সবাই সমান অধিকার নিয়ে সম্প্রীতির সঙ্গে বাস করছে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের কোনো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। প্রিয়া সাহা সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে অভিযোগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

এদিকে আজ শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘(প্রিয়া সাহার) এ ধরনের বক্তব্যের জন্য আমরা কড়া প্রতিবাদ এবং ধিক্কার জানাচ্ছি। তাঁর অসত্য অভিযোগের কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি কড়া প্রতিবাদ জানানো হবে। এরই মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার একটি উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি।’

আছাদুজ্জামান মিয়া আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সম্মান, উন্নয়ন, গণতন্ত্র এবং সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার জন্য এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। তিনি যা বলেছেন তা অমূলক ও মিথ্যা।’

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের এক শতক জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে, এ ধরনের কথা কেউ বলতে পারবে না।’