সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বিপৎসীমার ওপরে, ৩৮৮টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত

Looks like you've blocked notifications!

বন্যার পানিতে সিরাজগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় ৩৯টি ইউনিয়নের ৩৮৮টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব গ্রামের এক হাজার ১২৪টি পরিবার সম্পূর্ণ ও ৭৮ হাজার ৬৯৮টি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার ১৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষ পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্ট এলাকায় যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ সেন্টিমিটার কমলেও এখনো বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার কাজীপুর উপজেলার নতুন মেঘাই-ঢেকুরিয়া হাট বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ২০-২২টি গ্রামের মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফাটল এলাকায় ধস ঠেকাতে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে গ্রামবাসী মিলিতভাবে বালুর বস্তা নিক্ষেপ করে।

এদিকে, গত তিন দিনে তাড়াশ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চলনবিলের তাড়াশ উপজেলার সগুনা, নওগাঁ, মাগুড়া বিনোদ ও তাড়াশ সদর ইউনিয়নের ২০০ হেক্টর বোনা আমন ধান তলিয়ে গেছে।

অন্যদিকে জেলায় যখন বন্যাকবলিত মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে,  সময়ের মধ্যে সিরাজগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ও পৌর কর্মচারীদের কর্মবিরতি জেলাবাসীর দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

১৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩ হাজার ১২০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। দুই হাজার ৪০৫টি টিউবওয়েল, একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ৫৬টি মেডিকেল টিম, দুটি পৌরসভা ও পাঁচ হাজার ৩০৮ জন সম্পূর্ণ এবং তিন লাখ ১১ হাজার ৬৭৭ জন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয় হাজার ৫০৫টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ ও ৪৩ হাজার ৮১৩টি বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন হাজার ৪০০ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ এবং ১২ হাজার ৫৪৯ হেক্টর ফসলি জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। কাজীপুরে তিন হাজার ৮২৪টি হাঁস-মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ও ১৯১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে চৌহালীতে পাঁচটি ও কাজীপুরে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জেলার ৫১.৫২ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ ও ১৬৮.১৪ কিলোমিটার রাস্তা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ২৯ ব্রিজ ও কালভার্ট এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রে জানা যায়, বন্যা মোকাবিলায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা দুর্যোগ কমিটির সভায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

নদীভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কাজীপুরে এক হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১০০ টন চাল, এক লাখ টাকা, সদর উপজেলায় ৪৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৭৫ টন চাল, নগদ এক লাখ টাকা, শাহজাদপুরে ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৮৫ টন চাল ও এক লাখ টাকা, বেলকুচিতে ২৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৩০ টন চাল ও এক লাখ টাকা, চৌহালীতে ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৬৩ টন চাল ও এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৩৪৬.৭০০ টন জিআর চাল, তিন লাখ টাকা ও ৫০০ পিস নতুন তাঁবু মজুদ আছে। বন্যা মোকাবিলার জন্য আরো ৩০০ টন জিআর চাল, পাঁচ লাখ টাকা জিআর নগদ ও চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বন্যাকবলিত মানুষের বাড়িঘরে চুরি-ডাকাতিসহ আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত ভীতি দূর করতে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীর (বিপিএম) নির্দেশে পুলিশি সহায়তা দিতে রাতে নৌ টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, মেঘাই নতুন বাজার থেকে ঢেকুরিয়া হাট পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির পাইকড়তলী অংশে বেশ কয়েকটি ইঁদুরের গর্ত রয়েছে। ওই গর্ত দিয়েই পানি চুয়ে চুয়ে বের হচ্ছিল। স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা ফাটল বন্ধে কাজ শুরু করেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান, বন্যা মোকাবিলায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। সরকারিভাবে বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার, নগদ টাকা ও চাল বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।