মিন্নির বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করবেন রিফাত শরীফের বাবা
বরগুনায় প্রকাশ্যে খুন হওয়া রিফাত শরীফের হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে নিহত রিফাত শরীফের বাবা ছেলে রিফাত হত্যায় জড়িত সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত ফাঁসির দাবি জানান। এ সময় তিনি পুত্রবধূ আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও জানান। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির যখন বিয়ে হয়, তখন নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের কথা তাঁরা গোপন করে যান। মূলত এ কারণেই তাঁর ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। এ হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নি নিজেও জড়িত। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজেও তার প্রমাণ রয়েছে।
বরগুনার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধনে শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন নিহত রিফাতের মা ডেইজি বেগম, একমাত্র বোন ইসরাত জাহান মৌ, চাচা আবদুল লতিফ শরীফ, আবদুল আজীজ শরীফ, চাচাতো বোন অন্যন্যা প্রমুখ।
রিফাত শরীফের হত্যার বিচার দাবিতে রোববার বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নিহতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। ছবি : এনটিভি
মানববন্ধনে দুলাল শরীফ বলেন, ‘কিছু মানুষ প্রকৃত তথ্য না জেনে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মিন্নির পক্ষে লেখালেখি করছেন। তাঁদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা প্রকৃত সত্য জেনে তারপর লেখালেখি করেন। আপনাদের লেখালেখির কারণে আমার ছেলে হত্যার বিচার প্রভাবিত হতে পারে। একজন সন্তানহারা বাবা হিসেবে আমি যে আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসির অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে আছি, সেই প্রত্যাশা ব্যাহত হতে পারে।’
মিন্নিকে আইনি সহায়তা দিতে আসা আইনজীবীদের উদ্দেশে দুলাল শরীফ বলেন, প্রত্যেক অভিযুক্তের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তেমনি সুযোগ রয়েছে আইনজীবীর মধ্যে তাদের আদালতে নির্দোষ প্রমাণ করার সুযোগও। মিন্নির পক্ষে যেসব আইনজীবী আজ আদালতে উঠেছেন, তাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনার নিজেরা রিফাত হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করুন। যদি এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নি জড়িত থাকে, তাহলে মিন্নিসহ এ মামলার সব অভিযুক্তকে আইনি সহায়তা না দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রিফাতের স্ত্রী আয়শা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়। এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন।
আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নি, রিফাত ফরাজীসহ ১৪ জন অভিযুক্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া এ মামলার তিন নম্বর অভিযুক্ত রিশান ফরাজী রিমান্ডে রয়েছেন। আর এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
রিফাত শরীফের হত্যার বিচার দাবিতে রোববার বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। এতে উপস্থিত ছিলেন নিহতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। ছবি : এনটিভি
এদিকে রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ দুপুর ১২টায় শুনানি শেষে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী এ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সঞ্জিব দাস বলেন, “এ মামলার শুনানির পরে বিজ্ঞ বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘দ্বিতীয় প্রধান আসামি রিফাত ফরাজী ও অন্যতম আসামি রাব্বি আকন মিন্নির সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ছাড়া মিন্নি নিজেও এ হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাই তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হলো।’”
শুনানি শেষে মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও ব্লাস্টের আইনজীবীসহ স্থানীয় প্রায় ৩০ জন অ্যাডভোকেট আমরা মিন্নির পক্ষে জামিন শুনানি করেছি। আমরা আমাদের যুক্তি তুলে ধরেছি। আমরা মিন্নির পক্ষে জামিন পাইনি। এরপর আমরা আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাব।’
এর আগে বেলা ১১টার দিকে মিন্নির জামিনের জন্য শুনানি শুরু হয়। আধঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জামিন শুনানি চলতে থাকে। জামিনের জন্য আদালতে শুনানিতে মিন্নির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম, সদস্য অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের, ব্লাস্ট ও আসকের অ্যাডভোকেট দীপক চন্দ্র হালদার, অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল নোমান, অ্যাডভোকেট সাহিদা বেগম, অ্যাডভোকেট আবদুর রশীদ, অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমানসহ প্রায় ৩০ জন আইনজীবী। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সঞ্জিব দাস, অ্যাডভোকেট মজিবুল হক কিসলুসহ আরো অনেকে।