মুন্সীগঞ্জে বন্যা ও পদ্মার ভাঙনে ঘরছাড়া অর্ধশতাধিক পরিবার, আতঙ্কে এলাকাবাসী

Looks like you've blocked notifications!

কয়েক দিনের ব্যবধানে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রাম ও লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ৭০ পরিবারের ভিটেমাটি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো শতাধিক পরিবারসহ খড়িয়া মসজিদ। ফলে তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।

সংবাদ সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদিকে গত শুক্র, শনি ও রোববার ভাঙন এলাকা ঘুরে স্থানীয় লোকজনকে বাড়িঘর সরিয়ে নিতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে।

কুমারভোগ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জাকির হোসেন বলেন, ‘গত তিন দিনে অন্তত ৭০ হাত জায়গা নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। ভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।’

একই গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য রফিজ উদ্দিন জানান, নদীর পাড়ে মাসের পর মাস ভারী জাহাজ ও ট্রলার ভেড়ানোর কারণে ভাঙনের মাত্রা বেশি হয়েছে। কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি জাহাজ ভেড়ানোর বিনিময়ে পয়সা নিয়েছেন।

গত শতকের নব্বই দশকে টানা ১০ বছর পদ্মার ভাঙনে তেউটিয়া ও ধাইদা ইউনিয়ন দুটির অধিকাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এরপর দুই দশক ভাঙন বন্ধ থাকে। পাঁচ-ছয় বছর আগে খড়িয়া থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বে বালু ফেলে শিমুলিয়াঘাট তৈরি করা হয়। ফলে পদ্মার এই শাখা নদীর বাঁক পরিবর্তন হওয়ায় স্রোত এসে খড়িয়া গ্রামে সরাসরি আঘাত করে। এর ফলে প্রতিবছর বর্ষাকালে নদীতে লৌহজংয়ের কোথাও না ভাঙলেও খড়িয়া এক এক করে ভেঙেই চলেছে।

ভিটেমাটি ভাঙনের মুখে থাকা মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা ত্রাণ কিংবা আর্থিক সহযোগিতা চাই না। সরকারের কাছে একটাই দাবি, নদীশাসন করে আমাদের ভিটেমাটি রক্ষা করা হোক।’

স্থানীয়রা দাবি করেন, খড়িয়া গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বে পদ্মা সেতুর নদীশাসনের কাজ চলছে। সেতুর হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের সঙ্গে সামান্য কিছু খরচ এখানে করলে এ এলাকা ভাঙন থেকে রক্ষা পেত। বেঁচে যেত তাঁদের বাপ-দাদার ভিটেবাড়িসহ হাজারো এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা আরো বলেন, ‘খড়িয়া গ্রামের পাশাপাশি চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা পদ্মার ভাঙন ও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সে সঙ্গে চরের নয়টি গ্রামের বাসাবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চরবাসী। ফলে জীবনযাত্রা হয়ে পড়ছে দুর্বিষহ। চরাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এখনই ত্রাণ প্রয়োজন।’

এরই মধ্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ মুরাদ আলী ভাঙন ও বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘খড়িয়ার ভাঙন সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। এলাকাটি এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর নদীশাসনের আওতায় রয়েছে। আগামী অর্থবছরে ভাঙনরোধে কাজ শুরু হবে।’