‘আমি ছেলে ধরা না, আমি ছেলে ধরা না’, মৃত্যুর আগে তাসলিমার আকুতি

Looks like you've blocked notifications!
ঢাকার বাড্ডায় গণপিটুনিতে হত্যার শিকার তাসলিমা বেগম রেনু। ছবি : সংগৃহীত

প্রথমে বাসার সঠিক ঠিকানা বলা নিয়ে সন্দেহ; এরপর গণপিটুনি।

‘আমি ছেলে ধরা না, আমি ছেলে ধরা না’ বাঁচার এ আকুতিও শেষ রক্ষা করতে পারেনি তাসলিমা বেগম রেনুকে। গণপিটুনির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন। এরপরও চলতে থাকে গণপিটুনি। একপর্যায়ে নিভে যায় জীবন প্রদীপ।

গত শনিবার সকালে ছেলেধরা সন্দেহে রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে তাসলিমা হত্যার ঘটনা এভাবে বর্ণনা দিয়েছে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী। আজ সোমবার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

নাজমুল হক (৪৪) উত্তর-পূর্ব বাড্ডার বাসিন্দা। তিনি বিদ্যালয়ের পেছনের একটি বাড়িতে বসবাস করেন। তিনি বলেন, “ঘুম থেকে উঠেই শুনি গণ্ডগোল চলছে বাইরে। বাসা থেকে বের হয়ে দেখি স্কুলের ভেতরে অনেক লোক ‘মার মার’ বলে চিৎকার করছে। সে সময় জোরে জোরে এক নারী চিৎকার করে বলছেন, ‘আমি ছেলেধরা না, আমি ছেলেধরা না।’”

মো. সোলাইমান (৩৯) নামের এক স্থানীয় সবজি দোকানি বলেন, “ঘটনার সময় আমি স্কুলের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে সময় একজন লাঠি নিয়ে ভেতরে যাচ্ছিল। তাকে আমি চিনি না। সে ‘ছেলেধরাকে মার’ বলতে বলতে ভেতরে যায়। পরে আমি যখন স্কুলের ভেতরে গেলাম, তখন ওই নারীটির শরীর আর নড়ছে না। তখনো দুজন মারছে! ভাবা যায়?”

তাসলিমাকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে? কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে? উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর যাওয়া থেকে শুরু করে গণপিটুনিতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কী কী ঘটেছিল বিদ্যালয়ে- এসব জানতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের।

আকলিমা বেগম একজন অভিভাবক। তাঁর মেয়ে আফিফা আক্তার বিদ্যালয়টির দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবই দেখেছেন তিনি। ঘটনার সময়ে মোট তিনজন অভিভাবক প্রধান শিক্ষিকার রুমে গিয়েছিলেন তাসলিমাকে নিয়ে। সেই তিনজনের একজন আকলিমা বেগম।

উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক আকলিমা বেগম। ছবি : এনটিভি

ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল- এনটিভি অনলাইনকে তার বর্ণনা দিয়েছেন আকলিমা বেগম। তিনি বলেন, “সকাল ৮টার একটু বেশি হবে। ঘটনার সূত্রপাত স্কুল গেটের বাইরে। যে আপা (তাসলিমা) মারা গেছে, সে ছিল বাইরে। আপারে এই স্কুলের অভিভাবকরা এর আগে কখনো দেখেনি। তখন অভিভাবকরা জানতে চায়, আপনি কিসের জন্য এসেছেন এখানে? গেটের বাইরে থাকা অভিভাবকদের তখন তাসলিমা বলেছেন, ‘চার বছরের বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করব।’ এরপর তাসলিমা স্কুল গেটের ভেতরে ঢোকেন। তখন তাঁর সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকরাও ভেতরে ঢোকেন।

তখন আমিসহ তিনজন গেটের ভেতরে এক কোণে বসে ছিলাম। পারিবারিক গল্প করছিলাম। সে সময় সবাই গেটের ভেতরে হট্টগোল করছিল। তখন আবার তাসলিমা অভিভাবকদের বলেন, ‘আমি বাচ্চা ভর্তি করার জন্য এসেছি। এর আগেও একবার স্কুলের ম্যাডামদের সঙ্গে কথা বলে গেছি। তাই আবার এসেছি।’

তখন অভিভাবকরা তাসলিমা কাছে জানতে চান, আপনার বাসা কোথায়? সে সময় তাসলিমা অভিভাবকদের বলেন, ‘আমি (উত্তর বাড্ডার) আলীর মোড়ে ১৪ বছর ধরে থাকি।’ ১৪ বছর ধরে তিনি এই এলাকায় থাকলেও তাঁকে স্থানীয় অভিভাবকরা কখনো দেখেননি। তখন অভিভাবকরা তাসলিমাকে বলেন, আপনি আলীর মোড়ে থাকেন, চলেন আপনার বাসায় যাব। আপনার পরিবার থাকলে কোনো সমস্যা নেই, আমরা চলে আসব। ঠিক সে সময় তাসলিমা অভিভাবকদের বলেন, ‘আমি আলীর মোড়ে থাকি না, আমি মহাখালী থাকি।’

তাসলিমার বাড়ি যেতে চাওয়ার কারণ হলো, স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে গেছে। চারদিকে বাচ্চা পাচারকারী ধরা পড়ছে। একটা গুজব ছড়িয়ে গেছে। আবার ওই আপাকে এই এলাকায় কেউ দেখেনি। সেজন্য তাঁর বাড়ি গিয়ে যাচাই করতে চাইছে সবাই।

এরপর অভিভাবকরা আরো হট্টগোল শুরু করেন। সে সময় আমিসহ (আকলিমা বেগম) তিনজন অভিভাবক বসে ছিলাম স্কুল গেটের ভেতরে। তখন ঘটনাস্থলে থাকা ১০-১৫ জন অভিভাবকের কাছে আমি জানতে চাই কী হয়েছে। ঘটনা শুনে আমি অভিভাবকদের বলি, আপনারা এত চিল্লাচিল্লি কইরেন না। মানুষজন জড়ো হয়ে যেতে পারে। উপরে আপা (প্রধান শিক্ষিকা) আছেন। আপা যে সমাধান দেন সেটা আমাদের শোনা উচিত।

এরপর ১০-১৫ জন অভিভাবক উপরে উঠেন তাসলিমাকে সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু তখন প্রধান শিক্ষিকা শাহানাজ বেগম অভিভাবকদের বলেন, ‘আপনারা সবাই ঢুকবেন না। ১০ জন যদি উঠেন তাহলে উনার কথা শুনতে পাব না আমরা। আপনারা তিনজন উঠেন উপরে।’ পরে তিনজন অভিভাবক এবং তাসলিমা ঢোকেন প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে। পরে প্রধান শিক্ষিকা অভিভাবকদের বলেন, ‘আপনারা কেউ কথা বলবেন না। আমিই কথা বলব উনার (তাসলিমা) সঙ্গে।’

পরে শাহানাজ বেগম তাসলিমার সঙ্গে কথা বলেন। জিজ্ঞেস করলে রেনু প্রধান শিক্ষিকাকে বলেন, ‘আমার বাসা মহাখালী। আমি আমার চার বছর বয়সী মেয়েকে ভর্তি করতে এসেছি।’ কিন্তু তখন প্রধান শিক্ষিকা তাঁকে বলেন, ‘আমরা তো চার বছরের বাচ্চাকে ভর্তি করাই না। আর আপনি মহাখালী থেকে কেন এখানে ভর্তি করাতে এসেছেন?’ এরপর তাসলিমা আর কোনো কথা বলেননি। চুপ করে ছিলেন। তখন প্রধান শিক্ষিকা ঠিকানা দিতে বলেন তাসলিমাকে। ঠিকানা নেওয়ার জন্য সে সময় প্রধান শিক্ষিকা তাঁকে একটি কাগজ দেন।

সে সময় স্কুলের গেটে অনেক লোকজন ভিড় করতে থাকে। বাইরে থেকে লোকজন বলতে থাকে, বাচ্চা ধরাকে আমাদের কাছে দিয়ে দেন। না হলে আমরা কিন্তু তালা ভেঙে ওপরে উঠব। সে সময় ‘বাচ্চা পাচারের সঙ্গে স্কুলের শিক্ষকও জড়িত’ বলে নিচের লোকজন জোরে জোরে বলতে থাকে। এরপর প্রধান শিক্ষিকা মাইকে বলতে থাকেন, ‘আপনারা যে যার মতো চলে যান। উনার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তাঁর কোনো দোষ নেই।’

তাসলিমা যখন কাগজে ঠিকানা লিখতে থাকেন, তখনই স্কুলের মেইন গেটের তালা ভেঙে লোকজন উপরে উঠে যায়। তখন আমরা কাউকে ঠেকাতে পারিনি। আমাকে, ম্যাডামকে এবং আরো যে সব শিক্ষক ছিলেন রুমে, তাঁদের ধাক্কা মেরে ওই মহিলাকে (তাসলিমা) নিয়ে নিচে চলে যায় সবাই। সিঁড়ি দিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে তাঁকে নিচে নিয়ে যায়। এরপর আর কিছুই করতে পারিনি আমরা। পরে তাসলিমা মারা যান। মরে যাওয়ার অনেক পর পুলিশ আসে স্কুলে।” বলছিলেন আকলিমা।

উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহানাজ বেগম। ছবি : এনটিভি

প্রধান শিক্ষিকা যা বললেন

উত্তরপূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহানাজ বেগম বলেন, “আনুমানিক সকাল ৮টা হবে। স্কুলের প্রথম পিরিয়ড চলে তখন। সে সময় স্কুলের গেটের ভেতরে চিল্লাচিল্লি শুরু হয়। পরে তাসলিমাকে নিয়ে তিন-চারজন অভিভাবক আমার রুমে আসেন। ছেলেধরা সন্দেহে তাঁকে নিয়ে আসেন। পরে আমি কথা বলছি উনার সঙ্গে। সে সময় নিচে দেখি, প্রচুর লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। এলাকায় কে বা কারা রটিয়ে দিয়েছে স্কুলে একজন ছেলেধরাকে আটকে রাখা হয়েছে। অনেক লোকজন আর হট্টগোল দেখে আমরা স্কুলের মেইন গেটে তালা লাগিয়ে দেই।

কিন্তু তখন নিচ থেকে সব লোকজন চিৎকার শুরু করে। আমিসহ আমার সব শিক্ষক মিলে তাদের থামানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু হঠাৎ করে বহু লোক গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তখন আর সামাল দেওয়া যায়নি। আমি ভাবতেই পারিনি, তারা তালা ভেঙে উপরে উঠে আসবে। এরপর আমরা তাদের থামানোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারিনি। আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হলো। এরপর তাঁকে (তাসলিমা) ধরে নিয়ে নিচে চলে গেল লোকজন। এরপর আমি পুলিশকে ফোন দিলাম। কিন্তু পুলিশ আসতে আসতে মনে হয় তিনি মারা গিয়েছিলেন।”

প্রধান শিক্ষিকা আরো বলেন, ওই ভদ্রমহিলা স্কুল গেটে দুই রকম বাসার ঠিকানার কথা বলেছিলেন। ওটাই মূলত ঝামেলা বাধিয়েছে। তা না হলে হয়তো কিছুই হতো না।

ওসির মনে প্রশ্ন

এই ঘটনার বিষয়ে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পুরো ঘটনা নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। এই ঘটনায় আরো অনেকে গ্রেপ্তার হবে। আমি এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়ব। এটা গুজব হওয়ার পরও বাবারা তাদের সন্তানকে নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।’

ওসি বলেন, ‘তাসলিমাকে নিয়ে আমার ভেতরেও কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে। তিনি কেন মহাখালী থেকে এখানে মেয়েকে ভর্তি করতে এসেছেন? আমি শুনেছি, মাহাবুবুর রহমান নামের এক মানসিক চিকিৎসকের কাছে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। সম্ভবত তিনি মানসিকভাবে সমস্যায় ছিলেন। এ ছাড়া তাঁর ভেতরে হতাশাও ছিল। তবে তাঁকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই ঘটনায় জড়িতরা অবশ্যই শাস্তি পাবে। আমাদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় গণপিটুনি দিয়ে তাসলিমা বেগম রেনুকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া বাচ্চু, মো. বাপ্পী ও মো. শাহীনকে আজ সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। ছবি : স্টার মেইল

তিন আসামি রিমান্ডে

তাসলিমা বেগম রেনুকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে চারদিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মণ্ডল এ আদেশ দেন।

ঢাকার অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার আনিসুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আজ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে গ্রেপ্তার আসামি বাচ্চু (২২), মো. বাপ্পী (২৮) ও মো. শাহীনকে (২০) হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক প্রত্যেককে চার দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এ ছাড়া এ ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. জাফর (১৮) নামের একজন সিএমএম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও জানান উপকমিশনার। তিনি আরো জানান, আসামি বাচ্চুকে আজকে সকালেই গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেওয়া হয়। বাকিরা গতকাল রোববার গ্রেপ্তার হন। 

এর আগে বাড্ডা জোনের সহকারী উপকমিশনার এলিন চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুতগতিতে তদন্তের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ভিডিও ফুটেজ, স্কুলের শিক্ষকসহ স্থানীয়দের আমরা নজরে রেখেছি। হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য সবদিক বিবেচনা করে আমরা সামনে যাচ্ছি। আশা করছি, দ্রুতই এই হত্যাকাণ্ডের জট খুলবে।’

ঢাকার বাড্ডায় গণপিটুনিতে হত্যার শিকার তাসলিমা বেগম রেনুর কথা মনে করে মাঝেমধ্যে কেঁদে উঠছে মেয়ে তাসনিম তুবা। ছবিটি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রামের বাড়ি থেকে তোলা। ছবি : এনটিভি

তাসলিমার দাফন সম্পন্ন, কাঁদছে মেয়ে তুবা

নিহত তাসলিমার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায়। রাজধানীর মহাখালীতে চার বছরের মেয়ে ও মাকে নিয়ে থাকতেন তিনি। দুই বছর আগে স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। তাঁর ১১ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে। ছেলেটি বাড্ডায় বাবার সঙ্গে থাকে।

গতকাল রোববার রাত ৮টার দিকে রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাসলিমার মরদেহ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন নিহতের ভাগ্নে নাসির উদ্দিন টিটু।

গতকাল সন্ধ্যায় তাসলিমার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হলে বৃদ্ধা মা ছবুরা খাতুনসহ স্বজনদের মাতম আর আহাজারিতে আকাশ-বাতাশ ভারী হয়ে ওঠে। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। এ সময় পরিবারের লোকজন গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

জানা গেছে, তাসলিমারা এক ভাই ও পাঁচ বোন। তিনি সবার ছোট। পড়ালেখা শেষে তিনি ঢাকায় আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করেছিলেন। প্রাইভেটও পড়াতেন তিনি। আগামী বছরের জানুয়ারিতে বড় ভাই আলী আজগরের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল তাসলিমার। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া হলো না তাঁর। নির্মম মৃত্যুতে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

এদিকে তাসলিমার মৃত্যুর পর অসহায় হয়ে পড়েছে তাঁর ছোট মেয়ে তাসনিম তুবা। মায়ের কথা মনে পড়লেই কেঁদে উঠছে সে। তখন তাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাখছে স্বজনরা। কখনো বলছে, আম্মু নিচে গেছে। তার জন্য ড্রেস নিয়ে আসবে। কখনো মজার খাবারের আশ্বাস দিয়ে চুপ রাখছে। কখনো বিভিন্ন রকমের খেলার সামগ্রী দিয়ে মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে রাখছে।

নিহতের ভগ্নিপতি বদিউজ্জামান বলেন, অভিভাবকরা সন্তান ভর্তি করার জন্য স্কুলে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে গুজব ছড়িয়ে একজন শিক্ষিত-সংগ্রামী নারীকে এভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করতে হবে। এ সভ্য সমাজে এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তার করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যেন আর কোনো মানুষ এভাবে গুজবের বলি না হয়।