আ.লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা, রোয়াংছড়িতে আধাবেলা হরতালের ডাক

Looks like you've blocked notifications!
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মংমং থোয়াই মারমাকে গুলি করে হত্যা করেছে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। হত্যার প্রতিবাদে জেলা শহরে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল। ছবি : এনটিভি

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মংমং থোয়াই মারমাকে (৫০) গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যায় জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার রোয়াংছড়ি উপজেলায় আধাবেলা  হরতালের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে আয়োজিত প্রস্তুতি সভা শেষে মোটরসাইকেল চালিয়ে বান্দরবানের উদ্দেশে যাত্রা করেন তারাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মংমং থোয়াই মারমা। ফেরার পথে রোয়াংছড়ি-বান্দরবান সড়কের শামুকছড়ি এলাকায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাঁকে টার্গেট করে ১৫ রাউন্ড ব্রাশ ফায়ার করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা। এ সময় সন্ত্রাসীরা মৃত্যু নিশ্চিত করতে আরো পাঁচ রাউন্ড গুলি করে। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়কের পাশ থেকে মংমং থোয়াই মারমার মৃতদেহ উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে খবর পেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মো. ইসলাম বেবীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা হাসপাতালে ছুটে যান।

আওয়ামী লীগনেতাকে হত্যার জন্য আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করে হত্যার প্রতিবাদে বান্দরবান জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক ইসলাম বেবী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাহাদুর, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কাজল কান্তি দাশ প্রমুখ। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগনেতাকে হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রোয়াংছড়ি উপজেলায় আধাবেলা হরতালের ঘোষণা দেওয়া হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসলাম বেবী বলেন, পাহাড়ে তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের হত্যা করা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা জড়িত। পাহাড়ে অপহরণ, হত্যা এবং চাঁদাবাজি বন্ধে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগ নেতার হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রোয়াংছড়ি উপজেলায় আধাবেলা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে রোয়াংছড়ি বাজারের একটি হলরুমে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাটি শেষে মোটরসাইকেল চালিয়ে জেলা সদরে আসার সময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা মংমং থোয়াই মারমাকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে পাহাড়ে আধিপাত্য বজায় রাখতে জনসংহতি সমিতির অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এর আগে গত মে’ মাসে আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের তাইংখালী বাজারে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হামলায় জেএসএসের সহযোগী সংগঠন যুব সমিতির সদস্য বিনয় তঞ্চঙ্গ্যাকে (৩৫) গুলি করে হত্যা এবং ওই দিন রাতে রাবার বাগানের শৈলতন পাড়া থেকে যুব সমিতির কর্মী পুরাধন তঞ্চঙ্গ্যাকে (৩২) অপহরণ করা হয়। পরেরদিন জেএসএস কর্মী ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে বাবা  জয়মনি তঞ্চঙ্গ্যাকে (৫২) গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। একদিন পর আওয়ামী লীগের কর্মী ক্যচিং থোয়াই মারমাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এরপর ২৫ ’মে বান্দরবান পৌরশাখা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চথোয়াই মং মারমাকে অপহরণ করে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এরপর ২৫ জুন রোয়াংছড়ি উপজেলায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে জেএসএস কর্মী অংথুই চিং মারমা (৩৮) গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। পাহাড়ে আধিপাত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে বান্দরবানে জেএসএস এবং মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) দুটি গ্রুপের সশস্ত্র সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের।