ঘুষ কেলেঙ্কারি

জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে দুদক পরিচালক এনামুল বাছির

Looks like you've blocked notifications!
দুর্নীতি দমন কমিশনের সাময়িক বহিষ্কৃত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির আজ মঙ্গলবার কড়া পুলিশি পাহারায় আদালতে হাজির করা হয়। ছবি : ফোকাস বাংলা

চল্লিশ লাখ টাকার বেশি ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাময়িক বহিষ্কৃত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে তাঁকে জেল কোড অনুসারে ডিভিশন দেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েস জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।

এর আগে বিকেল ৩টায় আদালতে কড়া পুলিশি পাহারায় তাঁকে হাজির করা হয়। আদালতে প্রবেশের সময় থেকে তাঁকে বেশ হাসিখুশি দেখা গেছে।

দুদকের পক্ষে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এবং এনামুল বাছিরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কবির হোসাইন।

আদালতে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, অবৈধভাবে তথ্য পাচার ও ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত বিনষ্ট করার হীন চেষ্টাসহ সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিলেন। তাঁকে জামিন দেওয়া হলে মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত বিনষ্ট করতে পারেন এবং তদন্তকাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারেন।

গতকাল সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর দারুস সালামের নিজ বাসভবন থেকে দুদকের একটি দল তাঁকে গ্রেপ্তার করে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য এনটিভি অনলাইনকে জানান, গ্রেপ্তারের পর বাছিরকে সারা রাত রমনা থানায় রাখা হয়।

গত মঙ্গলবার দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মোহাম্মদ ফানাফিল্যা সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ডিআইজি মিজান ও সংস্থার পরিচালক বাছিরের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়।

গত ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে তাঁকে দায়মুক্তি দিতে দুদক পরিচালক বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে সমঝোতা করেন। ডিআইজি মিজান বিষয়টি রেকর্ড করে ফুটেজ ওই চ্যানেলকে দিয়ে দেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দুদকের এ পরিচালক রাজধানীর রমনা পার্কে বাজারের ব্যাগে করে ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন এবং বাকি ১৫ লাখ পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে দেওয়ার কথা বলেন। সেইসঙ্গে তিনি ছেলেকে স্কুলে আনা-নেওয়ার জন্য একটি গ্যাসচালিত গাড়ি দাবি করেন। এছাড়া তিনি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবৈধভাবে পাচার করেন।

এ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং কমিটি ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন। সেইসঙ্গে ডিআইজি মিজানের দুর্নীতি বিষয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে ১২ জুন নিয়োগ পান দুদকের আরেক পরিচালক মো. মঞ্জুর মোরশেদ।

অন্যদিকে,২০১৮ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকাকে জোর করে বিয়ে করার সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। ওই ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরসহ দুদকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এরপর নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে বিতর্কিত ডিআইজি মিজানকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। পরে ২৫ জুন তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের কথা সাংবাদিকদের জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

দুদক পরিচালক মঞ্জুর মোরশেদ তিন কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তিন কোটি সাত লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২৪ জুন বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় ১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ডিআইজি মিজানের জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করে।