মাকে খুঁজছে শিশু তুবা, বিচার দাবিতে রাস্তায়

Looks like you've blocked notifications!
তাসলিমা বেগম রেনু হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আজ মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা সদরে মানববন্ধন করা হয়। মায়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে শিশু তুবাও এতে অংশ নেয়। ছবি : এনটিভি

গুজবেই সব শেষ হয়ে গেছে। ছোট্ট শিশু তাসলিমা তুবা (৪) হারিয়েছে তার প্রিয় মা তাসলিমা বেগম রেনুকে। মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলেই তুবা বলে, তার মা ড্রেস আনতে গেছে, তার জন্য জুস আনতে গেছে। মা আসবে। আবার বলে, মা আমাকে ভাত খাইয়ে দেবে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে তুবার বিষয়ে জানতে চাইলে তার খালা নাজমুন নাহার নাজমা এসব কথা বলেন।

এদিকে তাসলিমা হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আজ মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা সদরে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে মানববন্ধন করা হয়। মায়ের নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে শিশু তুবাও মানববন্ধনে অংশ নেয়।

ঢাকার উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনিতে হত্যার শিকার নিহত তাসলিমার শিশু মেয়ে তুবা মাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানায়। মানববন্ধনের ব্যানারে মায়ের ছবির দিকে অপলক তাকিয়ে ছিল তুবা। এ সময় তার চোখেমুখে ছিলে মাকে ফিরে পাওয়া আকুতি।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন রায়পুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মারুফ বিন জাকারিয়া, রায়পুর পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক তানজিদ কামাল, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক জহির পাটওয়ারী, ফ্রেন্ডস ফোরামের সভাপতি তুহিন চৌধুরী,  উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক আজিজ জনি প্রমুখ।

রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রামে নানার বাড়িতে নানু ও খালাদের সঙ্গে আছে তুবা। মায়ের কথা ভুলছেই না সে। কাঁদছে মায়ের জন্য, মার হাতে খাবে, মার সঙ্গে ঘুমাবে এসব বায়না তার। মা ড্রেস নিয়ে ফিরবে, এ অপেক্ষা করছে।

স্বজনরা জানান, তাসলিমা বেগম রেনুরা এক ভাই ও পাঁচ বোন। তিনি সবার ছোট। পড়ালেখা শেষে তিনি ঢাকায় আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করেছিলেন। প্রাইভেটও পড়াতেন তিনি। পারিবারিক কলহের কারণে দুই বছর আগে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁর। বিচ্ছেদের পর ছেলে তাসফিক আল মাহি (১১) বাবার সঙ্গে থাকে। তাসলিমা তুবা থাকত মায়ের কাছে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে বড় ভাই আলী আজগরের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল রেনুর। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া হলো না তার। নির্মম মৃত্যুতে চলে গেলেন না-ফেরার দেশে।

নিহত রেনুর বোন নাজমুন নাহার নাজমা বলেন, ‘আদরের বোনটাকে এভাবে হারাতে হবে ভাবিনি। গুজব আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। গুজব ছড়িয়ে একজন নারীকে এভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে, এটি মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তার করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যেন আর কোনো মানুষ এভাবে গুজবের বলি না হয়।’

গত ২০ জুলাই সকালে ঢাকার উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তাসলিমা বেগম রেনুকে (৪০) ‘ছেলেধরা’ গুজব ছড়িয়ে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। দুই ছেলেমেয়েকে ভর্তির জন্য সেখানে খোঁজ নিতে গিয়ে গুজবের কবলে পড়ে গণপিটুনিতে তাঁর মৃত্যু হয়। পরদিন রোববার রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানের বাবার কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাঁর বোনের ছেলে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে আজ সকালে তাসলিমা বেগম রেনুর জন্য পরিবারিকভাবে দোয়া, মিলাদের আয়োজন ও কবর জিয়ারত করা হয়।