তুবাকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়তে চান খালাতো ভাই

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর বাড্ডায় গণপিটুনিতে হত্যার শিকার তাসলিমা বেগম রেনু, তাঁর ছোট মেয়ে তুবা ও বড় বোনের ছেলে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু (বাঁ থেকে)। ছবি : এনটিভি

রাজধানীর বাড্ডায় গণপিটুনিতে হত্যার শিকার তাসলিমা বেগম রেনুর শিশু মেয়ে তাসনিম তুবাকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চান তার খালাতো ভাই সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু। তুবা যাতে বড় হয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষগুলোকে আলোর পথে নিয়ে আসতে পারে সে রকম শিক্ষা দিতে চান তিনি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে তুবার বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করা খালাতো ভাই সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু এসব কথা বলেন। তিনি তাসলিমা বেগম রেনু হত্যার মামলার বাদী এবং তাঁর বড় বোনের ছেলে। গত শনিবার উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাসলিমাকে ‘ছেলেধরা’ আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনি অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, ‘আমার খালাতো বোন তুবাকে আমি এমন একটা শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই, যারা এখনো অন্ধকারে আছে, যারা এখনো সভ্যতা থেকে অনেক পেছনে আছে, যারা এখনো মানবতা বলতে কী বোঝায় সেটা বোঝে না, এই অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষগুলোকে আলোর পথে নিয়ে আসতে পারে, ওই রকম একটা শিক্ষা দিতে চাই তুবাকে। শিক্ষার জন্য তুবাকে যদি দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরেও পাঠাতে হয় সে ব্যবস্থাও করবেন বলে জানান তিনি।

সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বলেন, ‘তুবা ও তার ভাইয়ের মধ্যে যে ক্ষোভটা কাজ করছে সেটাকে আমরা ইতিবাচকতায় পরিণত করতে চাই। এটা আমাদের জাতি গঠনে কাজে লাগবে।’

টিটু বলেন, ‘তুবার মাকে যেই মানুষগুলো হত্যা করেছে, শারীরিকভাবে তাদের মানুষের মতো দেখা যায়, তবে মনুষ্যত্ববোধ, বিবেক এদের মধ্যে ছিল বলে মনে করি না। এরা অন্ধ, এদের হার্ট নেই, এদের অন্তর থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না।’

র‍্যাব কার্যালয় ও পুলিশের দুটি রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) তাঁকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন বলে জানান টিটু। দুজন ডিআইজির একজন ফোনে তাসলিমার ঘটনা শুনে কেঁদেছেন বলে জানান তিনি। টিটু বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারো কান্না আমি কখনো শুনিনি বা দেখিনি। কিন্তু দেখলাম তিনি একদম অন্তর থেকে যে জিনিসটা ফিল করছেন, আমার মনে হয় এই বর্বরতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষই ঠিক ওইভাবেই ফিল করছেন।’

টিটু বলেন, ‘সারা দেশে মানববন্ধন করা হচ্ছে, বিচার চাওয়া হচ্ছে। মানুষ এই বর্বরতার একটা সুন্দর সঠিক বিচার চাইছে। যেই বিচার একটা বার্তা বহন করবে। যাদের চিন্তার মধ্যে কলুষতা রয়েছে, মনুষ্যত্ব বা বিবেকবোধ বলতে কিছুই নেই তাদের বিরুদ্ধে এই বিচার যেন একটি বার্তা দেয়।’ এ সময় পুলিশ এবং গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

গুজব নিয়ে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বলেন, ‘বাড্ডা থানার ওসির সঙ্গে যখন কথা বলি,  উনি বলছিলেন, গুজবে কান দেওয়ার কথা। এই শব্দটা আমার কাছে খুবই বিরক্তিকর মনে হয়। বাঙালি আসলে হুজুগে বাঙালি। যদিও আমার চোখের সামনে অনেক কিছু ঘটে গেছে। এই জিনিসটা আমি কখনো বিশ্বাস করি না।’

টিটু আরো বলেন, ‘একটা মানুষ, ছোটবেলা থেকে তার ভেতরে যা কিছু প্রবেশ করে, সেসব থেকে সে একজন মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। পরিবার ও পারিপার্শ্বিকতা থেকে সে যা কিছু গ্রহণ করে। আমরা চাই আমাদের দেশে এখনো যেই মানুষগুলো ধ্বংসাত্মক চিন্তাভাবনা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, তাদের গঠনমূলক চিন্তাভাবনার মানুষে পরিণত করার চেষ্টা করা। এজন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা থেকে কাজ করলে হবে না। প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবার সব জায়গা থেকেই কাজ করতে হবে।’

এ ছাড়া তাসলিমা হত্যা মামলায় বিনা খরচে আইনি সহযোগিতা দেওয়ার জন্য আইনজীবীদের পুরো একটি প্যানেল পেয়েছেন বলে জানান টিটু। বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে এমন একটা দেশ যেখানে কিছু কুলাঙ্গার ছাড়া ভালো মানুষ কিন্তু আছে, যাদের অন্তর আছে, যারা কাজ করতে চায় মানুষের জন্য। 

দেশের বিদ্যমান আইনেই তাসলিমাকে পিটিয়ে হত্যার সুন্দর বিচার হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন টিটু।

গত ২০ জুলাই সকালে ঢাকার উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তাসলিমা বেগম রেনুকে (৪০) ‘ছেলেধরা’ গুজব ছড়িয়ে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। দুই ছেলেমেয়েকে ভর্তির জন্য সেখানে খোঁজ নিতে গিয়ে গুজবের কবলে পড়ে গণপিটুনিতে তাঁর মৃত্যু হয়। পরের দিন রোববার রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানের বাবার কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে আজ সকালে তাসলিমা বেগম রেনুর জন্য পরিবারিকভাবে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন এবং কবর জিয়ারত করা হয়।