স্বামীকে খুন করতে সৌদি থেকে টাকা পাঠান তানিয়া
বাগেরহাটে থাকা স্বামী কাঞ্চন শিকদারকে খুন করতে প্রেমিককে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন সৌদি আরবে থাকা বিউটি পার্লার কর্মী তানিয়া। সেই টাকায় রাজশাহীতে গলা কেটে কাঞ্চনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন প্রেমিক রাসেল শেখসহ চারজন। কিন্তু নিজের বুদ্ধিমত্তা ও স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসায় প্রাণে বেঁচে গেছেন কাঞ্চন। পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
রোববার দুপুরে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের সভা কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ।
গ্রেপ্তার হওয়া চারজন হলেন বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার গোড়ফা গ্রামের রাসেল শেখ (২৪), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সজীব (১৯) ও সদর উপজেলার ফতুল্লার আলীগঞ্জ গ্রামের কাউসার (২০) এবং পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার নলুয়াবাগি গ্রামের মিরাজ হোসেন (১৯)। গ্রেপ্তার চারজন পরস্পরের বন্ধু। তারা ‘এলিট সিকিউরিটি ফোর্স’ নামের একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মী। এদের মধ্যে রাসেল শেখ নিজেকে কাঞ্চন শিকদারের প্রবাসী স্ত্রী তানিয়ার প্রেমিক বলে দাবি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ জানান, কাঞ্চন শিকদার মোল্লাহাটের গোড়ফা গ্রামের জালাল শিকদারের ছেলে। প্রায় পাঁচ বছর আগে কাঞ্চনের সঙ্গে একই এলাকার তানিয়ার বিয়ে হয়। দেড় বছর আগে তানিয়া সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে তিনি বিউটি পার্লারে চাকরি করেন। সৌদি আরবে যাওয়ার আগে একই এলাকার রাসেল তানিয়ার সব কাগজপত্র ঠিকঠাক করে দেন। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সৌদি আরব থেকেও মোবাইল ফোনে নিয়মিত রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ হতো তানিয়ার। একপর্যায়ে তাঁরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। তানিয়ার দেশে ফেরার আগেই বিয়ের পথ পরিষ্কার করতে কাঞ্চনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। এজন্য সৌদি আরব থেকে তিনি ২০ হাজার টাকা অগ্রিম রাসেলের কাছে পাঠিয়ে দেন। এরপর স্ত্রীর কাছে কাঞ্চনকে পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট করে দেওয়ার কথা বলে রাসেল ও তাঁর তিন বন্ধু দুদিন আগে কাঞ্চনকে রাজশাহীতে নিয়ে আসেন।
পুলিশ সুপার বলেন, দুই দিন আগে রাজশাহীতে এসে তাঁরা নগরীর শিরোইল এলাকায় সিটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাঞ্চনকে গলা কেটে হত্যার উদ্দেশ্যে মিরাজ ও কাউসার শনিবার (২৭ জুলাই) রাত ১০টার দিকে একটি অটোরিকশায় চারঘাট উপজেলার হলিদাগাছি স্টেশনের পাশে ফুলতলা এলাকার ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যান। সেখানে তাঁরা কাঞ্চনকে অজ্ঞান করার চেষ্টা করলে তিনি চিৎকার দেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন গিয়ে মিরাজ ও কাউসারকে ধরে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী রাসেল ও তাঁর সহযোগী সজীবকে রাত ১২টার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
এসপি মো. শহিদুল্লাহ জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ছেলেধরা বা গলাকাটার গুজবের সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন রাসেল। কাঞ্চনকে হত্যার পর গলা কাটা বলে প্রচারের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। এজন্য তিনি কয়েকদিন আগে রাজশাহীর চারঘাটের ফুলতলা এলাকার ফাঁকা জায়গাকে বেছে নেন হত্যাকাণ্ডের স্থান হিসেবে। ওই স্থানের ছবি তিনি ইমোর মাধ্যমে তানিয়ার কাছে পাঠিয়ে দেন। ছবি দেখার পর তানিয়াও স্থানটিকে নিরাপদ মনে করে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেন। এরপর পরিকল্পনা মতো পাসপোর্ট করানোর নাম করে তানিয়ার স্বামী কাঞ্চনকে রাসেল ও তাঁর তিন বন্ধু ট্রেনে করে রাজশাহী নিয়ে আসেন।
পুলিশ সুপার আরো জানান, চারঘাটের ফুলতলা থেকে মিরাজ ও কাউসারকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাঁদের কাছ থেকে ছুরি ও চেতনানাশক ওষুধ জব্দ করেছে। পুলিশের জেরার মুখে তাঁরা মূলপরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দেন। কাঞ্চনকে হত্যার বিষয়ে তানিয়ার সঙ্গে রাসেলের ফোনালাপ ও ইমোতে কথোপকথনের অডিও পাওয়া গেছে।