জয়পুরহাটে সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে ছয়জনের মৃত্যু
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতরে নেমে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার সকালে উপজেলার সোনামুখি ইউনিয়নের জাফরপুর-পলাশবাড়ি হিন্দুপাড়া গ্রামের কৃষক নিখিল চন্দ্র মহন্তের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় দীলিপ চন্দ্র (৩১) নামের একজন প্রতিবেশী অসুস্থ হয়ে পড়েন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ছয়জনের পরিবারের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন আক্কেলপুরের জাফরপুর-পলাশবাড়ি হিন্দুপাড়া গ্রামের গৃহকর্তা নিখিল চন্দ্র মহন্তের ছেলে প্রীতম চন্দ্র মহন্ত (১৯), তাঁর কাকাতো ভাই গণেশ চন্দ্র মহন্ত (৪১) এবং একই উপজেলার গণিপুর গ্রামের সামছুল আকন্দের ছেলে হেডমিস্ত্রি (রাজমিস্ত্রি) শাহিন আলম (৩৮), একই গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে নির্মাণ শ্রমিক সজল হোসেন (২০), শাফি আলমের ছেলে শিহাব হোসেন(১৮) ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার খলিশ্বর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে মুকুল হোসেন (২৭)।
দুপুরে জাফরপুর-পলাশবাড়ি হিন্দুপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক নিখিল চন্দ্র মহন্তের বাড়িতে চলছে শোক। ফায়ার সার্ভিসের সাদা কাপড়ে ঢাকা মরদেহ সামনে রেখে নিহতের পরিবারের সদস্যদের কান্নার রোল। নিহত শ্রমিক, গৃহকর্তার ছেলে ও কাকাতো ভাইয়ের স্বজন ছাড়াও এলাকার মানুষের ভিড় ও কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছিল ওই বাড়িসহ পুরো এলাকা।
নিখিল চন্দ্র মহন্তের স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, দুই সপ্তাহ আগে ওই বাড়ির ইটের তৈরি নতুন রান্না ঘর ও বাথরুমের (পায়খানা) নিচে বড় করে সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়। ওই ট্যাঙ্কের ওপর রড-সিমেন্টের ঢালাই দেওয়ার পর ট্যাঙ্কের ওপরে (ওই রান্নাঘরের মেঝেতে) একটি ছোট আকারের মুখ রাখা হয়। কিন্তু ওই ট্যাঙ্কের মুখটিতে পলিথিন দিয়ে সিমেন্টের তৈরি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ট্যাঙ্কের মুখটি অপেক্ষাকৃত ছোট ও তা ঢেকে রাখার ফলে ভেতরে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে ছিল।
ঘটনাস্থলে থাকা আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কিরন কুমার রায় জানান, নিখিল চন্দ্র মহন্ত তাঁর ওই সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতরে থাকা শাটারিংয়ের কাঁঠ-বাঁশ ইত্যাদি উঠিয়ে নিয়ে তা পরিষ্কার করানোর জন্য শ্রমিক ঠিক করেন। সে অনুযায়ী বুধবার সকালে নিখিল চন্দ্র মহন্তের বাড়ির নির্মাণাধীন ওই সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে নেমে কাজ করার জন্য চারজন শ্রমিক তাঁর বাড়িতে যান। এদের মধ্যে রান্নাঘর ও বাথরুমের কাজ করা রাজমিস্ত্রি (হেডমিস্ত্রি) শাহীন আলমও ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হেডমিস্ত্রি) শাহীন আলমই প্রথম প্রথম ওই ট্যাঙ্কের ঢাকনাটি সরিয়ে মুখটি খুলে ট্যাঙ্কের ভেতরে (নিচে) নামেন। কিন্তু তিনি আর ওপরে উঠেননি। তাঁর কোনো সাড়া না পেয়ে একে একে ওই ট্যাঙ্কের ভেতরে নির্মাণ শ্রমিক সজল হোসেন, শিহাব হোসেন ও মুকুল হোসেন নেমে বিষক্রিয়ায় অচেতন হয়ে পড়েন। চারজনের কেউ ওপরে না ওঠায় এবং ট্যাঙ্কে নামার পর কারও সাড়া না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত গৃহকর্তা নিখিল চন্দ্র মহন্তের কাকাতো ভাই গণেশ চন্দ্র মহন্ত ও ছেলে প্রীতম চন্দ্র মহন্তও ভেতরে নামেন এবং তাদেরও একই অবস্থা হয়। সে সময় দীলিপ নামের ওই গ্রামের এক যুবকও ভেতরে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু গ্যাসের গন্ধ (শুকতে) পেয়ে ভেতরে আর নামতে পারেননি। কিন্তু তাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এ দিকে এ ঘটনার খবর জানতে পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ফায়ার সার্ভিস কর্মী এবং আশেপাশের স্থানীয় লোকজন ও প্রতিবেশীরা ভেতরে বাঁশ ও দড়ির ফাঁস বানিয়ে নিচে নামিয়ে দিয়ে সুকৌশলে ও অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে ওই ছয়জনকে ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে ওপরে উঠান। এ সময় পাঁচজনই ছিলেন মৃত। কেবল একজনকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। অসুস্থ দীলিপকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরে ময়নাতদন্তের জন্য নিহতদের মরদেহ জয়পুরহাট অঅধুনিক জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম আকন্দ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালাহ উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।