১৪ প্রতিষ্ঠানের দুধ উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রিতে বাধা নেই

Looks like you've blocked notifications!

মিল্কভিটা, ফার্মফ্রেশ ও প্রাণ মিল্কের পর বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাকি ১১ কোম্পানির দুধ উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি বন্ধ করে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদলত।

আদালতে বিএসটিআইর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান। এ বিষয়ে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম শুনানি করেন।

এই আদেশের ফলে ১১ ব্র্যান্ডের দুধ উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এ নিয়ে হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত হওয়া ১৪টি প্রতিষ্ঠান দুধ সংগহ্র ও বিপণনের অনুমোদন পেল।

এই ১১ প্রতিষ্ঠান হলো আফতাব মিল্ক অ্যান্ড মিল্ক প্রোডাক্ট লিমিটেডের ‘আফতাব’ ব্র্যান্ড, আমেরিকান ডেইরি লিমিটেডের ‘মো’ ব্র্যান্ড, বারো আউলিয়া ডেইরি মিল্ক অ্যান্ড ফুডস লিমিটেডের ‘ডেইরি ফ্রেশ’ ব্র্যান্ড, ব্র্যাক ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রজেক্টের ‘আড়ং ডেইরি’ ব্র্যান্ড, ড্যানিশ ডেইরি ফার্ম লিমিটেডের ‘আয়রান’ ব্র্যান্ড,  ইছামতি ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টসের ‘পিউরা’ ব্র্যান্ড, ঈগলু ডেইরি লিমিটেডের ‘ঈগলু’ ব্র্যান্ড, উত্তরবঙ্গ ডেইরির ‘মিল্ক ফ্রেশ’ ব্র্যান্ড, শিলাইদহ ডেইরির ‘আল্ট্রা’ ব্র্যান্ড, পূর্ব বাংলা ডেইরি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের ‘আরওয়া’ ব্র্যান্ড ও তানিয়া ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টসের ‘সেইফ’ ব্র্যান্ড।

প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান এই আদেশ দেন।

এর আগে গত ২৯ ও ৩০ জুলাই মিল্কভিটা, ফার্মফ্রেশ ও প্রাণ মিল্কের পক্ষেও একই আদেশ দিয়েছিলেন চেম্বার আদালত।

গত ২৮ জুলাই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকায় বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সধারী ১৪ প্রতিষ্ঠানের পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি পাঁচ সপ্তাহের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

লাইসেন্সধারী সব ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান আছে কি-না সে বিষয়ে চারটি প্রতিষ্ঠানের ল্যাবের পরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।

গত ১৪ জুলাই এক আদেশে বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সধারী সব ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান আছে কিনা, তা এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করতে চারটি ল্যাবকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

চারটি ল্যাব হলো- ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, আইসিডিডিআরবি ও সাভারের বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণাগার।

এরপর ২৩ জুলাই তিন সংস্থার প্রতিবেদন হাতে পায় বিএসটিআই। এরপর এগুলো আদালতে জমা দেন। এছাড়া নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের তৈরি করা (বিসিএসআইআর ও পরমাণু শক্তি কমিশনের ল্যাবে পরীক্ষা করা) ১১ কোম্পানির দুধ পরীক্ষার প্রতিবেদনও আদালতে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে উপস্থাপন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের প্রতিবেদনও।

গত বছরের ১৬ মে বাণিজ্যিকভাবে পাস্তুরিত দুধ সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিস রিসার্চ, আইসিডিডিআরবি) একটি গবেষণা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. তানভীর আহমেদ।

এই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ২১ মে এক আদেশে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসচিব এবং বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের পর গত ২৫ জুন বিএসটিআইয়ের আইনজীবী আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। কিন্তু কোনো শুনানির আগেই সেদিন তিনি গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন।

১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে আশঙ্কাজনক বা ক্ষতিকর কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটিশনের (বিএসটিআই) দেওয়া প্রতিবেদনে আদালত সন্তোষ প্রকাশ করেছেন- গণমাধ্যমে সংস্থাটির আইনজীবীর দেওয়া এমন বক্তব্যে ৯ জুলাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। ওইদিন আদালতের আদেশ ছাড়া দুধ নিয়ে কোনো প্রকার বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক গত ২৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি লেকচার থিয়েটারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কিছু খাদ্যের গুণগতমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন। এরপর দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়ও পাস্তুরিত দুধের ১০ নমুনার সবকটিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে বলে ১৩ জুলাই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তাঁর এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর আদালত চারটি ল্যাবে পরীক্ষার নির্দেশ দেন।