এবার আমাদের লক্ষ্য হবে জনগণকে স্বাধীন করা : অলি আহমদ
নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার মতো নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন এলডিপির সভাপতি ও জাতীয় মুক্তিমঞ্চের আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় মুক্তিমঞ্চের উদ্যোগে দেশের বিরাজমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় অলি আহমদ বলেন, দেশের মানুষকে মুক্ত করাই মুক্তিমঞ্চের লক্ষ্য। অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু মহামারি, শেয়ার বাজার ও ব্যাংকের অর্থ লুট, বন্যায় অপর্যাপ্ত ত্রাণ ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সংকট ও গুজব বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন বক্তারা।
অলি আহমদ বলেন, ‘মানুষের মনে শান্তি নাই, চোখে ঘুম নাই, জীবনের নিরাপত্তা নাই। সবাইকে সত্য উপলব্ধি করতে হবে, ন্যায়ের পথে থাকতে হবে। এবার আমাদের সবার লক্ষ্য হবে জনগণকে স্বাধীন করা।’
এলডিপির চেয়ারম্যান বলেন, দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং মুক্তির পথ বের করতে হবে। আমাদের এই মুক্তিমঞ্চের অন্যতম লক্ষ্য হলো দেশের জনগণকে মুক্তি দেওয়া।
‘দেশের সার্বিক বিরাজমান পরিস্থিতি উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অলি আহমদ বলেন, জনগণকে বাঁচানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনারা যেভাবে এগিয়ে এসেছিলেন, আমি মঞ্চে বলেছিলাম, হয় মুক্তি হবে, না হয় মৃত্যু হবে। সেই প্রতিজ্ঞা করে আপনারা এখান থেকে যাবেন, দেশকে বাঁচান দেশের জনগণকে বাঁচান।
জাতীয় মুক্তিমঞ্চের আহ্বায়ক বলেন, দেশের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হননি। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের সময়ে জনগণ বিভিন্নভাবে নির্যাতিত ও অত্যাচারিত হয়েছে। কারণ দেশ স্বাধীন হয়েছে, জনগণ স্বাধীন হয় নাই। তাই আমাদের সবাইকে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে হবে। আইনের শাসন, সুশাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত, দলীয়করণ মুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে হবে। আমরা একে অপরকে দোষারোপ করে কখনো দেশকে তার অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে পারব না। সবাইকে সত্য উপলব্ধি করতে হবে, ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে।
অলি আহমদ বলেন, ব্যাংকের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। বর্তমানে দেশে ব্যাংক আছে, টাকা নাই। হাসপাতালে ওষুধ নাই, মশা মারার ওষুধ নাই, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নাই। আদালত আছে, বিচার নাই। কথা বলার অধিকার নাই। ভয়াবহ বন্যা আক্রান্তর জন্য রিলিফ নাই। ঘরে ভাত নাই, পকেটে টাকা নাই। যোগ্য ব্যক্তিদের কদর নাই, সমাজে মনুষ্যত্ব নেই। সংসদ সদস্য আছে, মনোনীত নন। পার্লামেন্ট আছে, বিরোধী দল নাই। লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশ দিতে ভবন নির্মিত হয়, কারো মাথা ব্যথা নাই। যন্ত্রপাতি ও মালামাল বুঝে না নিয়ে বিল পরিশোধ হয়, দুদকের ব্যবস্থা নাই। রাষ্ট্র স্বাধীন, তবে জনগণ স্বাধীন নয়। শিক্ষিত যুবকরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, চাকরির কোনো সংস্থান নাই। নালা-নর্দমা পরিষ্কার নাই। নদী-খাল আছে, সংস্কার নাই। গালাগালি ছাড়া বক্তব্য নাই, গঠনমূলক আলোচনা ও সমাবেশ করার পরিবেশ নাই। রাষ্ট্র আছে, গণতন্ত্র নাই। সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের উপায় কী?’
এলডিপির চেয়ারম্যান বলেন, দেশের এই করুণ পরিস্থিতিতে বিজ্ঞজনদের মতামত নেওয়া একান্তই জরুরি ছিল। বিজ্ঞজনদের মতামত আমরা গ্রহণ করেছি, আগামীতে আমরা ঘরোয়াভাবে বসব।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীরপ্রতীক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, নিউ ন্যাশন পত্রিকার সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, কল্যাণ পার্টির সহসভাপতি জাহেদ আবেদিন, অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম ও এলডিপির সহসভাপতি নেয়ামুল বশির।