গুজবের প্রভাব কামারপট্টিতেও
রাজধানীর মিরপুরে থাকেন আব্দুল মতিন (৪৫)। আগামী ঈদুল আজহায় গরু কোরবানি করবেন তিনি। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কারওয়ানবাজারের কামারপট্টিতে এসে একটি চাপাতি, একটি কোপছুরিসহ মোট তিনটি ছুরি কিনেছেন। কিন্তু এসব ব্যাগে করে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন তিনি। কারণ, ‘গলাকাটা’ গুজবে কান দিয়ে কেউ যদি তাঁকে গণপিটুনি দেয়!
কামারপট্টির ‘মা-বাবার দোয়া হার্ডওয়ার’ থেকে ক্রেতা আব্দুল মতিন দোকানিকে বলেন, ‘আমার হাতে অস্ত্র দেখে কেউ যদি কল্লাকাটা (গলাকাটা) ভেবে আমাকেও গণপিটুনি দেয়? আজকাল যে গুজব চারদিকে!’
মো. বজলুর রহমান ওই দোকানের মালিক। তিনিই বিক্রি করছেন বসে বসে। তখন বজলুর রহমান আব্দুল মতিনকে বলেন, ‘কোনো সমস্যা হবে না। আপনারা শিক্ষিত মানুষ এগুলা বললে কীভাবে হবে? ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আমি আপনাকে ভাউচার আর দোকানের কার্ড দিচ্ছি। কেউ কিছু বললে ভাউচার আর কার্ড দেখাবেন।’
এরপর আব্দুল মতিন এক হাজার ২০০ টাকার ভাউচারসহ চাপাতি-ছুরি নিয়ে দোকান ত্যাগ করেন। তিনি চলে যাওয়ার পর বজলুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “আজ সকাল থেকে ৪০ ক্রেতা এসেছেন চাপাতি ছুরি কিনতে। এর ভেতরে নয়জন ‘কল্লাকাটা’ গুজবের কথা বলেছেন। তাঁরা ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু আসলেই কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। গুজব ছড়ায় পড়ছে বলে এসব কথা আসতেছে।”
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানীর দা, বটি, ছুরি চাপাতি বিক্রির দোকানে ভিড় করছে লোকজন। ছবিটি আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার থেকে তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
বেচাকেনা কেমন চলছে-এমন প্রশ্নে বজলুর রহমান বলেন, ‘সকাল থেকে হাজার বিশেক টাকার বিক্রি হইছে। কিন্তু হওয়ার কথা তো অন্তত ৫০ হাজার টাকা। তবে সামনের শুক্রবার থেকে ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’
এরপরে ভোলা সদর হার্ডওয়্যার নামের একটি দোকানের দোকানি মো. মইনউদ্দিন বলেন, “অন্যবার এ রকম ভয় কারো ভেতরে দেখিনি। কিন্তু এবার কয়েকজন দা-ছুরি কিনতে এসে কল্লাকাটা গুজবের ভয়ের কথা বলেছে। আমরা তাঁদেরকে বলেছি, ‘এসব ফাউ কথা পান কই? পত্রিকায় দেখছেননি?’ তারপর তারা আর কিছু বলে না।”
আরো পাঁচজন দোকানির সঙ্গে এসব গুজব নিয়ে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের ভেতরে চারজনই গুজব নিয়ে ক্রেতাদের ভয়ের কথা জানান। এদের ভেতরে জাহাঙ্গীর আলম নামের এক দোকানমালিক বলেন, ‘আজ সকালে একজন আর দুপুরে একজন এই গুজবের কথা বলেছেন। আসলে কিন্তু কিছুই হবে না বা হচ্ছে না। তাও ভয় আছে অনেকের ভেতরে।’